হবিগঞ্জে আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য-বিশুদ্ধ পানির সংকট

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি হবিগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৮:৫৭ পিএম, ২০ জুন ২০২২
মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া বন্যাদুর্গতরা

বন্যাকবলিত হবিগঞ্জের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক জায়গায় নেই বিদ্যুৎও। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া বন্যাদুর্গতরা।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, জেলার আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ, লাখাই ও বানিয়াচং উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪ হাজার ৫৮১টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ৪১০ জন মানুষ। তাদের জন্য এরই মধ্যে সরকার থেকে ৭৬৩ টন চাল, ২০ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা, ২ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ১৫ টন চাল ও ৫ লাখ টাকা বিতরণ হয়েছে।

jagonews24

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবীগঞ্জ ও আজমিরীগঞ্জের পর এখন নতুন করে বানিয়াচং এবং লাখাই উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। অসংখ্য বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে টিউবওয়েল, টয়লেটও। বাড়িঘর ছেড়ে মানুষজন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। গরু, বাছুর, ছাগলসহ গবাদি পশু নিয়ে তারা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে উঠেছেন। কাঁথা, বালিশ ভেজা থাকায় অনেককেই কষ্টে রাত কাটাতে হচ্ছে। তাদের খাদ্য সংকটও রয়েছে। লাখাইসহ কয়েকটি উপজেলায় এখনো ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়নি। এতে বন্যাদুর্গতরা কষ্টে দিন পার করছেন।

লাখাই উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের বুল্লা সিংহগ্রাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবারসহ অবস্থান নিয়েছেন কবির মিয়া। তিনি বলেন, ‘চার দিন হয়েছে পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছি। কিন্তু এখনো ত্রাণ পাইনি। স্বজনদের নিয়ে কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নেই বিদ্যুৎও।’

jagonews24

বুল্লা গ্রামের রানু আক্তার বলেন, ‘বাড়িঘরে পানি উঠেছে। তাই অসহায় হয়ে এসে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। এখানে ত্রাণ পাইনি। খাদ্য সংকট তো আছেই। এমনকি বিশুদ্ধ খাবার পানিরও সংকট রয়েছে।’

বামৈ সরকারি মুক্তিযোদ্ধা কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন বামৈ গ্রামের মো. সেলিম মিয়ার পরিবার। তার স্ত্রী খাদিজা বেগম বলেন, ‘চার দিন হয়েছে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা পাচ্ছি না। তবে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। এখানে টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিদ্যুৎ নেই। কুপিবাতি জ্বালাতে হচ্ছে।’

বৃদ্ধা মমতাজ বেগম বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রের দরজা-জানালা সব ভাঙা। চোরের ভয় তো আছেই। এর মধ্যে বিদ্যুৎ নেই। অন্ধকারেই পরিবার নিয়ে থাকতে হচ্ছে। অন্তত রাতে বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা যেন করা হয়।’

ইউপি চেয়ারম্যান খোকন গোপ জাগো নিউজকে বলেন, বুল্লা ইউনিয়নের ২৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দিদের জন্য ইউনিয়নে পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষ উঠতে শুরু করেছেন।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে না। তারা উঁচু এলাকায় অন্যের বাড়িতে গিয়ে উঠছে। কাউকেই এখনোও ত্রাণ দেওয়া হয়নি। পর্যায়ক্রমে তাদের ত্রাণ দেওয়া হবে। এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিত্তবানদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শরীফ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, পর্যায়ক্রমে সবাইকে ত্রাণ দেওয়া হবে। অতিদুর্গত এলাকাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। কাউকেই বাদ দেওয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ এলে হুট করে দেওয়া কঠিন। তবে কুপিবাতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কেরোসিন দিয়ে তাদের অন্ধকার থেকে মুক্ত রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই একজন দুর্গত মানুষও যেন অনাহারে বা অন্ধকারে থাকতে না হয়। মঙ্গলবারের মধ্যে সবাইকে ত্রাণ দেওয়া হবে।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।