মাদরাসা পরিচালকের নির্দেশে শিক্ষকের মাথা ন্যাড়া
পটুয়াখালীর বাউফলে মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আনিচুর রহমানের নির্দেশে অপর এক শিক্ষককের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
৩ জুলাই বাউফল পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ডের হাজি সড়কে এ ঘটনা ঘটলেও বুধবার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাফেজ মনিরুল ইসলাম বাউফল মদিনাতুল উলুম নুরানি হাফিজি ক্যাডেট মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন। একজন ভালো শিক্ষক হিসেবে তার সুনাম ছিল। ওই মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আনিচুর রহমানের সঙ্গে তার মতবিরোধ দেখা দিলে সম্প্রতি তিনি চাকরি ছেড়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার লাউতলী জামিয়া মদিনাতুল উলুম মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি চলে যাওয়ার পর কয়েকজন ছাত্র ওই মাদরাসা ছেড়ে অন্য মাদরাসায় গিয়ে ভর্তি হন।
কয়েক দিন আগে বাউফল পৌর শহরের ২নং ওয়ার্ডের জাকির হোসেনের ছেলে মুজাহিদ (৮) ওই মাদরাসা ছেড়ে হাফেজ মনিরুল ইসলামের চাঁদপুরের মাদরাসায় গিয়ে ভর্তি হন। মুজাহিদের বাবা তার ছেলেকে ভর্তি করে দিয়ে আসেন।
এতে ক্ষুব্ধ হন বাউফল মদিনাতুল উলুম নুরানি হাফিজি ক্যাডেড মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আনিচুর রহমান। তার ধারণা শিক্ষক মনিরুল ইসলাম ওই ছাত্রকে ফুসলে নিয়ে চাঁদপুরে তার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেছেন। এরপর তিনি অভিভাবক পরিচয়ে অন্য একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে হাফেজ মনিরুল ইসলামকে কয়েকজন ছাত্র দেওয়ার নামে চাঁদপুর থেকে গত ৩ জুলাই বাউফলে ডেকে আনেন। পরে কালিশুরী এলাকার একটি মাদরাসার রুমে আটকে তাকে মারধর করেন। এরপর তার নির্দেশে মাওলানা জসিম উদ্দিন নামের অপর এক শিক্ষক মনিরুল ইসলামের মাথা ন্যাড়া করে দেন এবং তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ও সাড়ে ৪ হাজার টাকা রেখে রাত ৮টার দিকে তাকে ছেড়ে দেন।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষক মাওলানা মনিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমাকে পরিকল্পিতভাবে বাউফলে ডাকা হয়েছিল। আমাকে সাড়ে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া আমার মাথা ন্যাড়া করা হয়। সেসময় আমি তাদের হাত-পা ধরে ক্ষমা চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে ক্ষমা করেনি।
‘তবে আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে দেখে বাউফলের পরিচিত জনরা গত ৪ জুন আমাকে বাউফলে আবারও ডেকে আনেন। আমি যাওয়ার পরে তাদেরও বিচার হয়েছে। সে সময় ছাত্রলীগের হাসান ভাই, ইউনুস ভাইসহ স্থানীয়রা অনেকে ছিলো। সবাই মিলে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করলে আমি তাদের মাপ করে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, আমি যে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিয়েছিলাম সেটা এবং আমার যাতায়াত বাবদ এক হাজার টাকা নিয়েছি। আমি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি তারাও তাদের ভুল বুঝতে পারছে।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, বিষয়টি জেনে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। ওই শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলেছি। অভিযোগ পেলে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মদিনাতুল উলুম নুরানি হাফিজি ক্যাডেট মাদরাসার পরিচালক মাওলানা আনিচুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আব্দুস সালাম আরিফ/এফএ/এএসএম