৬-৭ ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত মেহেরপুরের মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মেহেরপুর
প্রকাশিত: ০১:৩৭ পিএম, ০৮ আগস্ট ২০২২

মেহেরপুরে পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত কয়েকদিন ধরে তীব্র গরমের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় সাধারণ মানুষ পাগলপ্রায়। সরকারি ঘোষণা মতে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে পড়তে হচ্ছে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের। জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ বণ্টনে বৈষম্য থাকায় এই অবস্থা হচ্ছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।

মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পাঁচটি সাব-স্টেশনে বিদ্যুতের চাহিদা ৮০ এমভিএ। যার বিপরীতে বিদ্যুৎ মিলছে ৪০ থেকে ৫০ এমভিএ। ফলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন এলাকায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা আবার কোনো কোনো সময় আরও বেশি সময় ধরে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা।

বর্তমানে আমন ধান রোপণের ভরা মৌসুম চলছে। আবার বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ পাম্প দিয়ে মাছচাষ করছেন চাষিরা। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও মাছচাষিরা। বিদ্যুতের এই লুকোচুরিতে সাধারণ মানুষ যেমন কষ্ট পাচ্ছেন, তেমনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনারও ব্যাঘাত ঘটছে। প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা।

৬-৭ ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত মেহেরপুরের মানুষ

বিশ্বব্যাপী মূল্যবৃদ্ধি জনিত পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে রাত ৮টার পর সারা দেশব্যাপী দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপণীবিতান, কাঁচাবাজার ইত্যাদি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ নির্দেশ বাস্তবায়নে প্রচার-প্রচারণাও চালানো হচ্ছে এবং এ নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে জেলার ব্যবসায়ীরা সরকারি নির্দেশ মেনেই তাদের দোকানপাট পরিচালনা করছেন। এরপরও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। এনিয়ে জনমনে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।

মেহেরপুর বোসপাড়ার জাহেদুল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিন ধরে রাত ১০টার পর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কয়েক দফায় বন্ধ রাখা হচ্ছে। সকালেও এমন সমস্যার কারণে পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটছে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের ছাত্র মিলন হোসেন জানান, সন্ধ্যার পর ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। প্রচণ্ড গরমে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

৬-৭ ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত মেহেরপুরের মানুষ

মেহেরপুর গোভিপুরের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক বাকিবিল্লাহ জানান, রাত নেই দিন নেই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ইচ্ছামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করছে। সকাল থেকে রাত অবধি অসংখ্যবার বিদ্যুৎ থাকছে না। তাছাড়া রাত থেকে সকাল অবধিও একই ঘটনা ঘটে। গত কয়েকদিন ধরে তীব্র গরমে এমনিতেই জনজীবন বিপর্যস্ত, এরওপর বিদ্যুৎ না থাকার যন্ত্রণা। রাতে যেসময় মানুষ একটু শান্তিতে ঘুমাবে ঠিক সে সময়েই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় আরামের ঘুম হারাম হয়ে যায়।

মেহেরপুর সদর উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের মাছচাষি হাসান আলী ও রাফিউল জানান, বিদ্যুতের কারণে মাছের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। জেনারেটর চালিয়ে মাছচাষ করে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে।

উজলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম ও মিনারুল ইসলাম বলেন, একদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাট অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ধানের শীষ বের হচ্ছে না। বের হলেও প্রচুর পরিমাণ ধানে চিটা হচ্ছে। যেখানে বিঘাতে ৩০ থেকে ৩৫ মণ ধান হওয়ার কথা সেখানে ১৫ থেকে ২০ মণ ধান হবে।

৬-৭ ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত মেহেরপুরের মানুষ

গোভিপুর গ্রামের কৃষক কামাল হোসেন জানান, ভ্যাপসা গরমে জমিতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় বার বার সার ও কীটনাশক দিয়ে কাজ হচ্ছে না।

মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার আবু রায়হান জানান, জাতীয় পর্যায়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির ফলে সারাদেশে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং হচ্ছে।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামসুল আলম জানান, জেলায় এ বছর ২০ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রগুলো পুনরায় আমাদের কাজে লাগাতে হবে। বিদ্যুৎচালিত পাম্পগুলো রাতের বেলা চালাতে হবে। তব প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে না।

আসিফ ইকবাল/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।