বাড়ছে আমনের উৎপাদন ব্যয়, চাষাবাদে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ১১:০৩ এএম, ১১ আগস্ট ২০২২

হঠাৎ করেই দেশের বাজারে জ্বালানি তেল ও সারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকার কৃষকরা। তাই উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় এবার আমন চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়েছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষক পর্যায়ে সরাসরি প্রণোদনার দাবি জানানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, পটুয়াখালীর প্রায় শতভাগ জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়ে থাকে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে- এবার জেলায় ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী এখন আমন আবাদের ভরা মৌসুম চলছে। তবে সার ও ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে কৃষকদের মধ্যে ধান চাষাবাদে খুব বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আবাদি জমির অর্ধেকেও এখন পর্যন্ত চাষ দেওয়া হয়নি। তবে জ্বালানি ও সারের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়াকেও এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার বশাক বাজার এলাকার কৃষক আলমগীর গাজী। নিজের জমি চাষাবাদের পাশাপাশি তিনি স্থানীয় কৃষকদের জমিও তার ট্রাক্টর দিয়ে চুক্তিতে চাষ করে দিতেন। তবে এবার হঠাৎ করেই তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে তিনি বিপদে পড়েছেন। আলমগীর গাজী বলেন, আমাদের চাষাবাদের অবস্থা খুব খারাপ, বিশেষ করে এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জমি তেমন একটা চাষের উপযোগী হয়নি। এর পর নতুন করে তেলের দাম লিটারে বেড়েছে ৩৪ টাকা। মৌসুম শুরুর দিকেই অনেক কৃষকের সঙ্গে চুক্তি করেছি প্রতি একর জমি চার হাজার টাকায় চাষ করে দেবো। কিন্তু এখন তেলের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে এই টাকায় চাষ দেওয়া সম্ভব নয়। এখন জমি চাষাবাদ বাদ দিয়ে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।

বাড়ছে আমনের উৎপাদন ব্যয়, চাষাবাদে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক

এদিকে, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। পটুয়াখালী সদর উপজেলার শারিকখালী এলাকার কৃষক কালাম হাওলাদার বলেন, ‘সারের দাম বাড়তি, তেলের দাম বাড়তি। এখন কেমনে কী করমু। জমি আল্লাহর ওয়াস্তে ফালাইয়া রাখছি। চাষ দিচ্ছি না। কোনোভাবেই পোষাইতে পারছি না। ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ট্রাক্টর কিনে এই দামে ডিজেল কিনে কেমনে জমি চাষ করমু।’

বাড়ছে আমনের উৎপাদন ব্যয়, চাষাবাদে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক

সরকারি হিসাবে পটুয়াখালী জেলায় শতভাগ জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়। গত বছরগুলোতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় আমন আবাদে জমিতে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন না হলেও এবার কম বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক জমিতে এখনো চাষ দেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আমন আবাদ করতে এবার অনেক জমিতেই সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হবে। এতে করে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়বে বলে জানান তারা।

বাড়ছে আমনের উৎপাদন ব্যয়, চাষাবাদে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, সরকার সব সময় কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে। বর্তমানেও সরকারকে ১০৬ টাকা কেজিতে ইউরিয়া কিনতে হয়। আগে কৃষককে প্রতি কেজি ইউরিয়া কিনতে হতো ১৬ টাকায়, এখন কিনতে হবে ২২ টাকায়। এছাড়া জালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করায় কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বাড়বে। এ ক্ষেত্রে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে সরকার উদ্যোগ নিলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

আব্দুস সালাম আরিফ/এমআরআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।