বেশি দামে ডিম বিক্রি করেও খরচ পোষাতে হিমশিম খামারিদের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাঙ্গামাটি
প্রকাশিত: ০৪:৩০ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২২

জ্বালানি তেলের সঙ্গে তাল মিলয়ে দেশে সব কিছুর দাম বেড়েছে। ফলে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে ডিম উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। ফলে কমে গেছে উৎপাদনও। ডিমের দাম বাড়িয়েও খরচ পোষাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খামারে এক হাজার ডিম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ টাকায়। যেখানে একটি ডিমের পাইকারি মূল্য পড়ছে সাড়ে ১১ টাকা। অন্যদিকে একটি ডিম উৎপাদনে মোট খরচ হচ্ছে প্রায় ৮ টাকা ৫০ পয়সা। এ ডিম খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস প্রায় ১৩ টাকা দরে।

রাঙ্গামাটি পৌর শহরের খামারি মো. ইসমাঈল বলেন, ‘আমাদের খরচ আগের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে গেছে। গত জানুয়ারিতে আমরা যে খাদ্য কিনতাম ১৮৫০ টাকায়, সেই খাদ্য এখন কিনছি ২৭৫০ টাকা দিয়ে।’

রাঙ্গামাটি এম পোল্ট্রি ফারমের স্বত্বাধিকারী মাসুদুল হক বদরুল বলেন, ‘দুই মাস আগেও ডিমের দাম ছিল ৮ টাকা। এতে খামারিদের ক্ষতি হয়েছে। কারণ খাদ্যর দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও উঠেনি। তাই অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে উৎপাদন কমে গেছে। কিন্তু বাজারে চাহিদা ঠিকই আছে। সেজন্য চাহিদার তুলনায় ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে যে সব খামারিরা বর্তমানে ডিম উৎপাদন করছে তাদের খরচ বেশি হচ্ছে। কারণ দুই মাসে চার দফায় খাদ্যের দাম ৯০০ টাকা বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় প্রতি বস্তায় গাড়ি ভাড়া বাবদ খরচ বেড়েছে ৩০ টাকা করে। এত বাড়তি খরচে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।’

খুচরা ডিম বিক্রেতা জনি দে বলেন, ‘বাড়তি দামে ডিম কেনার পর পরিবহনে আনতে যে খরচ হচ্ছে তাতে এক টাকা লাভ তুলতেও কষ্ট হয়ে পড়ছে। আগে যেখানে ডিম ৮-১০ টাকায়ও বিক্রি করে অন্তত দুই টাকা লাভ তুলতে পারতাম।’

এদিকে ডিমের দাম বাড়ার প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে হোটেলগুলোতেও। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়. আগে যেখানে একটি ডিম নেওয়া হতো ২০ টাকা সেখানে এখন হয়েছে ২৫ টাকা।

পুরাতন বাস স্টেশনের আলম ভাত ঘরের স্বত্বাধিকারী দিদারুল আলম বলেন, ‘আমার এখানে প্রায় কাস্টমার হচ্ছেন গাড়িচালক ও শ্রমিক শ্রেণির লোকজন। তারা খরচ বাঁচাতে ডিম এবং সবজি দিয়ে প্রায় সময় ভাত খান। কিন্তু এখন তো ডিমেরও ৫টাকা বেড়ে গেছে। তাও বিক্রি হচ্ছে, কী করবে মানুষ তো আর মাছ-মাংস দিয়ে খেতে পারছে না। এতে তো তাদের খরচ পোষাবে না।’

eggs1

ট্রাকচালক করিম মিয়া বলেন, ‘যে টাকা আয় করি তা দিয়ে তো আর প্রতি বেলা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালো পারি না। তাই কয়েক বেলা শাক সবজি কিংবা ডিম দিয়ে চালিয়ে নিতে হয়। কিন্তু এখন তো সেটারও দাম বাড়তি। সবজির মতো ডিমেরও দাম বেড়েছে। আমরা এখন কোথায় যাবো? যত জ্বালা এ পেট নিয়ে।’

রাঙ্গামাটির প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. বরুণ কুমার দত্ত জাগো নিউজকে বলেন, ‘উৎপাদন খরচ বেড়েছে তাই বাজারে ডিমের দামও বাড়তি। এছাড়া দেশে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে এতে প্রতিটি খামারে উৎপাদনও কমে গেছে। মূলত সমস্যা হচ্ছে উৎপাদন কমেছে এবং খরচও বেড়েছে। তবে একটি ডিম মানুষের যে পরিমাণে শারীরিক সহায়তা করে সে তুলনায় এ দাম বেশি বলে মনে হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, রাঙ্গামাটির যে সব খামার আছে তা থেকে উৎপাদিত ডিম দিয়ে সারাবছর চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। এমনিতেও আমাদের জেলার চাহিদা মিটানোর জন্য চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ডিম আনতে হয়।

এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।