ভিডিও ভাইরালের পর শিক্ষক বললেন ‘৪০টি পিটান দিছি’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ০৮:০১ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০২২
কক্ষে আটকে রেখে ছাত্রকে পেটাচ্ছেন প্রাইভেট শিক্ষক

কোচিং সেন্টারে বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টুমি করায় বরগুনার তালতলীতে এক স্কুলছাত্রকে বেত দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছেন ছগির হোসেন নামের এক প্রাইভেট শিক্ষক। পেটানোর সময় সাতটি বেতও ভাঙেন ওই শিক্ষক।

ওই ছাত্রকে পেটানোর একটি ভিডিও মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে ঘটনাটি প্রায় দেড় মাস আগে উপজেলার লাউপাড়া বাজারে সাকসেস কোচিং সেন্টারে ঘটে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, কোচিং সেন্টারের একটি রুমে ওই ছাত্রকে আটকে রাখেন ছগির হোসেন। কিছু সময় পর খালি গায়ে লুঙ্গি পরা অবস্থায় বেত দিয়ে ছাত্রকে পেটাচ্ছেন। একটি বেত ভেঙে গেলে আরেকটি নিয়ে পেটান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার লাউপাড়া বাজারে সাকসেস কোচিং সেন্টার নামের একটি কোচিং খোলেন স্থানীয় ছগির হোসেন। যার সরকারি কোনো অনুমতি নেই। সেখানে ওই এলাকার লাউপাড়া সাগর সৈকত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রী টাকার বিনিময়ে প্রাইভেট পড়ে। কোচিং সেন্টারে ছগির একাই শিক্ষকতা করেন।

ভুক্তভোগী স্কুলছাত্র জানায়, ‘প্রায় দেড় মাস আগে কোচিংয়ে আমার ক্লাসের এক বন্ধুর সঙ্গে দুষ্টুমি করি। বিষয়টি দেখে প্রাইভেট শিক্ষক ছগির স্যার রেগে যান। তার ভয়ে আমি তিন দিন কোচিং সেন্টারে যাইনি। পরে প্রাইভেটের বড় ভাইদের দিয়ে আমাকে ধরে নিয়ে একটি রুমে আটকানো হয়। এরপর ছগির স্যার ১০টি বেত নিয়ে আসেন। প্রায় আধাঘণ্টা আমাকে পেটাতে থাকেন। আমি স্যারের হাতে পায়ে ধরলেও মারধর করতে থাকেন। আমাকে মারতে মারতে সাতটি বেত ভেঙে ফেলেন তিনি। কিছু সময় পর আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি।’

ওই ছাত্র আরও জানায়, ‘জ্ঞান ফিরলে আমাকে আবারও মারধরের ভয় দেখানো হয় যাতে মারধরের বিষয়টি কাউকে না বলি। পরে স্থানীয় ফার্মেসি থেকে আমাকে ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। আমি স্যারের ভয়ে এতদিন মুখ খুলিনি। হঠাৎ শুনি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি দেখে আমি নিজেও অবাক হয়ে গেছি।’

এ বিষয়ে সাকসেস কোচিং সেন্টারের মালিক ও শিক্ষক ছগির হোসেন বলেন, ‘ওই ছাত্র দুষ্টুমি করার পরে আমি বেত দিয়ে ৪০টি পিটান (মারধর) দিছি। সেটা কে বা কারা ভিডিও করেছে তা আমি দেখিনি।’

লাউপাড়া সাগর সৈকত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওই কোচিং সেন্টারে আমার এ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। ভিডিওতে যেভাবে দেখেছি তাতে গরুকেও মানুষ এভাবে পেটায় না। ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু জাগো নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম সাদিক তানভীর জাগো নিউজকে বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমিও দেখেছি। খুবই দুঃখজনক বিষয়। পাশাপাশি ফৌজদারি অপরাধের ভেতরেও পড়ে। সে ক্ষেত্রে থানায় ওই ছাত্রের অভিভাবকরা মামলা করতে পারেন।

এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।