হঠাৎ পর্যটকশূন্য বান্দরবান
বছরের প্রায় পুরোটা সময়ই পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পর্যটকদের আনাগোনা চোখে পড়ে। শীত মৌসুমে পর্যটক সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। স্থানীয় হোটেল-মোটেলগুলো সকাল-সন্ধ্যা মুখর থাকে। কিন্তু হঠাইৎ দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বান্দরবানে এখন সুনসান নীরবতা। দেখা নেই পর্যটকের। ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেমেছে স্থবিরতা। এতে বেকায়দায় পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
বৃ্হস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকালে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি জেলার রুমা ও রোয়াংছড়ি এলাকায় বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর আনাগোনা বাড়ছে। এসব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে যৌথবাহিনী। এ অবস্থায় থানচি, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি ও বান্দরবান সদর এলাকার পর্যটনস্পটগুলো ভ্রমণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হলেও রুমা-রোয়াংছড়ি এলাকার পর্যটনস্পট ভ্রমণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।। গত সোমবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রুমা-রোয়াংছড়ি এলাকার পর্যটন স্পট ভ্রমণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করেছে স্থনীয় প্রশাসন।
এ অবস্থায় পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ছে সবুজে ঘেরা এ পাহাড়ি জেলা। এতে প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।

গতকাল বুধবার (১৯ অক্টোবর) ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, তথাকথিত হিজরতের নামে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর গ্রেফতার ১২ জনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জানতে পারে, নিরুদ্দেশ জঙ্গিরা পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এবং অবস্থান করছে। এরপর গত ১০ অক্টোবর পার্বত্য এলাকায় যৌথ অভিযান শুরু হয়। মূলত, হিজরতের নামে ঘরছাড়া এই জঙ্গিদের শনাক্ত এবং আইনের আওতায় আনতেই অভিযানে নেমেছে র্যাব।
তিনি বলেন, অপারেশনে বেশ অগ্রগতি হয়েছে, আমরা বেশ কিছু দূর পর্যন্ত চলে এসেছি। আশা করছি শিগগির কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনতে পারবো। যেহেতু বান্দরবান দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা এবং পর্যটকরা সেখানে ঘোরাফেরা করেন, এজন্য স্থানীয় প্রশাসন ওই এলাকায় পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
বান্দরবানে ঘুরতে আসা নোয়াখালী সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাশেদ জাগো নিউজকে জানান, বন্ধু-বান্ধব মিলে ১৫ জনের একটি দল ১০-১২ দিনের জন্য ঘুরতে এসেছেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেবতাকুম ও বগালেক ঘুরে দেখার। কিন্তু এ দুটি স্পট ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করার কারণে তাদের যাওয়া হচ্ছে না। ফলে আশপাশের স্পটগুলো ঘুরেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে তাদের।
বান্দরবান ঝিপ-মাইক্রোবাস চালক সমিতির সদস্য মো. জহিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) সারাদিন পর্যটকবাহী গাড়িগুলো বন্ধ থাকার পর থেকে পর্যটক অনেক কমে গেছে। এতে তারও ভাড়া কমে গেছে। অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছেন। চালক সমিতির অন্য সদস্যদেরও একই অবস্থা।

সমিতির সভাপতি মো.জাফর ইকবাল জাগো নিউজকে জানান, বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করায় পর্যটকবাহী গাড়ি রুমা-রোয়াংছড়ি এলাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছে স্থানীয় প্রশাসন। নীলগিরি ও সদর এলাকার কয়েকটি স্পটে গাড়ি চলাচল করছে। এ কারণে পর্যটকের উপস্থিত নেই বললেই চলে।
স্থানীয় হোটেল হিলটনের ম্যানেজার আক্কাস উদ্দীন সিদ্দিকী জানান, তাদের হোটেলে ৭২টি রুম রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র একটি রুম বুকিং হয়েছে। যারা আগাম বুকিং নিয়েছিলেন তারাও এখন বুকিংয়ের টাকা ফেরত নিচ্ছেন।
হোটেল হিলভিউয়ের ম্যানেজার মো. অমর ফারুক জানান, যে পর্যটকেরা টানা কয়েক দিনের জন্য রুম বুকিং নিয়েছিলেন তারা দু-একদিন থেকে ফিরে যাচ্ছেন। যারা আগাম বুকিং নিয়েছিলেন তারাও বুকিং বাতিল করে টাকা ফেরত নিচ্ছেন।
হোটেল গ্রেন্ডভ্যালির ম্যানেজার মো. সুমন জানান, হোটেলগুলো এখন প্রায় পর্যটকশূন্য। তাদের হোটেলে মাত্র দুটি রুম বুকিং আছে।
এ বিষয়ে জেলা হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, বান্দরবানে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রুমা-রোয়াংছড়ি ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছ স্থানীয় প্রশাসন। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সে বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই। পর্যটক উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। হোটেল-মোটেলগুলোও প্রায় ফাঁকা। হোটেল মালিকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। তাদের প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে।

যৌথবাহিনীর চলমান অভিযান দ্রুত শেষ করে রুমা-রোয়াংছড়ি ভ্রমণে আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরীজি জাগো নিউজকে বলেন, যৌথবাহিনী সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। ফলে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনা বলবৎ থাকবে। তবে স্থানীয়দের জন্য চলাচল উন্মুক্ত থাকবে।
নয়ন চক্রবর্তী/এমকেআর/এএসএম