কৃষি আবহাওয়ার তথ্যবোর্ড অচল, সেবা বঞ্চিত সোনারগাঁয়ের কৃষকরা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে কৃষকদের জন্য স্থাপন করা কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ডগুলো অচল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এর ফলে কৃষকরা তা থেকে কাঙিক্ষত কোনো সেবা পাচ্ছেন না।
ইউনিয়নগুলো হলো মোগরাপাড়া, পিরোজপুর, সনমান্দি, বৈদ্যেরবাজার, শম্ভুপুরা, বারদী, জামপুর, কাঁচপুর, সাদিপুর ও নোয়াগাঁও।
এসব ইউনিয়ন পরিষদে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গিয়েছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নেই রয়েছে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ড। কিন্তু কোনোটিই সচল নেই। অনেকটা জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে বোর্ডগুলো। অনেক জায়গায় সংখ্যা গণনার ঘুঁটিগুলো অকেজো অবস্থায় রয়েছে। এটির তথ্য কখনো আপডেট করা হয়েছে কি না তা বোঝার কোনো উপায় নেই। নিয়ম অনুযায়ী, আগে ও পরের তিনদিনের কৃষিভিত্তিক আবহাওয়ার নানা তথ্য এ বোর্ডে হালনাগাদ থাকার কথা থাকলেও সেগুলো কোনো দিনই সচল ছিল না।
মূলত, কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ডের মাধ্যমে গত তিনদিন আগের এবং পরবর্তী তিনদিনের মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ সম্পর্কে জানা যায়। এছাড়া আগামী তিনদিনের আবহাওয়াভিত্তিক কৃষিবার্তা ও বিপদ সংকেত কী হবে তা সম্পর্কেও জানা যায়। কিন্তু বোর্ডগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় তা কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে। তাই অতি দ্রুত এটি চালু করার জোর দাবি করেন সোনারগাঁয়ের কৃষকরা।

শম্ভুপুরা ইউনিয়নের কৃষক জব্বার মিয়া বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড থাকলেও আজ পর্যন্ত আমরা এটা থেকে আবহাওয়ার কোনো তথ্য পাইনি। এটা চালু করলে আমাদের জন্য অনেক উপকার হয়।
আলমগীর হোসেন নামের বারদী ইউনিয়নের এক কৃষক জানান, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতিবছর আমাদের ফসলের অনেক ক্ষতিসাধন হয়। আগাম তথ্য পেলে আমরা আগে থেকেই সর্তক হতে পারতাম। আমাদের এখন টেলিভিশন থেকে শুনে সর্তক থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের তো সবসময় টেলিভিশনের সামনে থাকা সম্ভব না।
জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বদিউজ্জামান জানান, আমাদের এখানে স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল নেই শুধু তথ্য বোর্ডটাই রয়েছে। যা সব সময় বন্ধই থাকে। আমাদের কৃষি অফিসার যারা আছেন বর্তমানে তারা সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের খোঁজ খবর নিয়ে থাকেন। কৃষকদের চাষাবাদ করতে কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।

এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকদের বিভিন্ন ফসল রক্ষায় আগাম তথ্য দিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারের পক্ষ থেকে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। সোনারগাঁয়ের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ অফিসেই কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ড রয়েছে। তবে এর কোনো কার্যক্রম নেই। কারণ এটি পরিচালনার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয় তা সরকার থেকে এখনো দেওয়া শুরু হয়নি।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবছর শুধু কৃষকদের নিয়ে সেমিনার করার জন্য একটি নির্দিষ্ট বাজেট দেওয়া হয়। আমরা এর পাশাপাশি কীভাবে অল্প জমিতে বেশি ফসল উৎপাদন করা যায় সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়া তাদের জন্য সরকার থেকে কোনো অনুদান আসলে আমরা তাদের সুষমভাবে বণ্টন করে থাকি। তবে আমাদের ১০টি ইউনিয়নেই কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ড চালু করা সম্ভব হলে আমাদের চাষীরা অনেক উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি। কিছুদিন পূর্বে আমাদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি অতি দ্রুত আমাদের ইউনিয়নগুলোতে কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস তথ্য বোর্ডের কাজ চালু করার।
রাশেদুল ইসলাম রাজু/জেএস/জিকেএস