ভালো নেই পুতুল নাচের শিল্পীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৬:৫৯ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০২২

একসময় গ্রামে-গঞ্জে, হাট-বাজার, স্কুল কিংবা খোলা মাঠে মঞ্চ সাজিয়ে পুতুল নাচের আসর বসতো। শিশু থেকে শুরু করে সববয়সীরা ছুটে যেতেন পুতুল নাচ দেখতে। এখন আর সেই অনুষ্ঠান চোখে পড়ে না। শুধু পুতুল নাচই বিলুপ্তি হয়নি, এরসঙ্গে জড়িত কুশীলবরা পড়েছেন চরম বিপাকে।

দীর্ঘদিন ধরে পুতুল নাচ পেশাকে আগলে রেখে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলো অর্থের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একসময় যে মানুষগুলো পুতুল নাচ দেখিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিতেন, এখন তারা আছেন কষ্টে।

কথা হয় কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা দক্ষিণ পাথরডুবি গ্রামের মনিকা পুতুল নাচ অ্যান্ড থিয়েটারের মালিক মকবুল হোসেনের সঙ্গে।

putul1

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, “আজ থেকে ৪০ বছর আগে আমি যাত্রাপালায় কাজ করতাম। সেই সময় আমাদের ভুরুঙ্গামারিতে ভারতের দিনহাটা থেকে ‘মা কালী পুতুল নাচ’ নামের একটি টিম আসে। যাত্রাপালা করতে গিয়ে সেখানে পরিচয় হয় ‘মা কালী পুতুল নাচ’ এর মালিক মুরালী বর্মণের সঙ্গে। যাত্রাপালার পাশাপাশি পুতুল নাচ নিয়ে টিম করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তিনি ৮০ হাজার টাকায় পুরো পুতুল সেট আমার কাছে বিক্রি করে দেন। পরে ৯ জন সদস্য নিয়ে শুরু হয় প্রশিক্ষণ পর্ব।”

“ভারতের কুচবিহার, শিলিগুড়ি, দিনহাটা থেকে পুতুল নাচের মাস্টার এনে টানা ছয় মাস প্রশিক্ষণ নিই। ১৯৮৪ সালের দিকে দিনহাটা থেকে আসা মাস্টার শ্যামল কুমার বর্মনের হাত ধরে ‘মা কালী পুতুল নাচ’ নাম বদলে ‘মনিকা পুতুল নাচ অ্যান্ড থিয়েটার’ নাম দিয়ে যাত্রা শুরু করি। প্রথম দিকে শুধু কুড়িগ্রাম জেলার ভেতরে অনুষ্ঠান শুরু করলেও ১৯৮৭ সালে সরকারি নিবন্ধন পাওয়ার পর বাইরের জেলাতে অনুষ্ঠান করা শুরু হয়।”

putul1

মকবুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রশাসন এখন আমাদের প্রোগাম করার অনুমতি দেয় না। কারণ বিভিন্ন সময়ে দেখা যায় পুতুল নাচের নামে বিভিন্ন ব্যক্তিরা অশ্লীল নাচ-গান করান। সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া কি এভাবে টিকে থাকা যায়? তবে আমি যতদিন বেঁচে আছি এই পুতুলের সঙ্গেই জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই।’

মনিকা পুতুল নাচ অ্যান্ড থিয়েটারের সভাপতি ভানু বর্মণ জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে পুতুল নাচ বন্ধ। ফলে আমাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা খুব কষ্টে আছি।’

পালাকার আবুল হোসেন বলেন, ‘পুতুল নাচ বন্ধ হয়ে গেছে। আগের মতো আমাদের ডাক আসে না। বছরে সরকারিভাবে দু-একটি অনুষ্ঠানে ডাক পড়ে। সে সময় ৪০০-৫০০ শো টাকা পাই। সারা বছর দিনমজুর করে সংসার চলে।’

putul1

তবলা বাদক স্বপন বর্মণ বলেন, ‘আমি এ পেশায় আছি ৩০ বছর। আগে পুতুল নাচ ভালো চলতো। মোবাইলের যুগে এখন আর মানুষ দেখে না। ফলে শো চালাতে পারছি না। আয়-রোজগার কমে গেছে। আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।’

মূক নাচ শিল্পী হোসেন আলীর স্ত্রী নুরবানু। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রায় ২০ বছর ধরে পুতুল নাচ বন্ধ। এখন আগের মতো আয়-রোজগার নেই। বাচ্চাদের ভরণপোষণ নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’

putul1

জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার আলমগীর কবির জাগো নিউজকে বলেন, মনিকা পুতুল নাচ অ্যান্ড থিয়েটার দলটির দুজন সরকারিভাবে ভাতার আওতাধীন। বাকিদেরও পর্যায়ক্রমে আনা হবে। এছাড়া বাৎসরিক ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এলে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, সরকার ঐতিহ্যবাহী পুতুল নাচের ব্যাপারে উৎসাহী। পুতুল নাচ প্রদর্শনীর বিষয়ে কোনো বাধা নেই বলেও জানান তিনি।

এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।