থেমে আছে জমি অধিগ্রহণ, সেতু নির্মাণের ৬ মাসেও হয়নি সংযোগ সড়ক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মেহেরপুর
প্রকাশিত: ১১:৩৩ এএম, ০২ নভেম্বর ২০২২
নির্মাণের ছয় মাসেও হয়নি সেতুর সংযোগ

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর গার্ডার সেতু নির্মাণের ছয় মাসেও হয়নি এক অংশের সংযোগ সড়ক। এখনো জমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় আটকে আছে সড়কের কাজ। ফলে ৯ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে গাংনী ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বাসিন্দাদের। তবে বিষয়টি সমাধানে জোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বামন্দী এইচডি থেকে প্রাগপুর জিসি ভায়া মধুগাড়ি ঘাট সড়কের মাথাভাঙা নদীর ওপর গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুর ব্যয় ধরা হয় ৭ কোটি ২৯ লাখ ৩২ হাজার ৯৭৯ টাকা। সেতুটি নির্মাণের ফলে মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ার বাসিন্দারা ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ও শিক্ষাসহ নানা সুবিধা পাবে। সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য স্থানীয়রা জমি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেতু নির্মাণের পর স্থানীয়রা বেঁকে বসেন।

স্থানীয়দের দাবি, জমি সেতুর জন্য লাগলে দেবেন, তবে এর জন্য ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। তবে এলজিইডি বলছে, বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর দুই জেলার মানুষের জন্য তৈরি (মধুগাড়ি-বেতবাড়িয়া) সংযোগ সেতুর নির্মাণকাজ ছয় মাস আগে শেষ হয়েছে। সেতুর দৌলতপুর উপজেলার পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি হলেও গাংনী উপজেলার অংশে এখনো হয়নি। সেতু হলেও এখনো ভোগান্তি দূর হয়নি দুপাড়ের লক্ষাধিক মানুষের। ফলে চিকিৎসাসেবা কিংবা ফসলাদি নিয়ে এপারের মানুষকে ওপারে যেতে হলে ৯ কিলোমিটার ঘুরতে হচ্ছে।

মেহেরপুর গাংনী মোমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তমা খাতুন জানায়, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে দুই থানার শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে। মাথাভাঙ্গা নদীর সেতু থেকে নামার কোনো সড়ক নেই। তবে আমাদের অংশের সংযোগ সড়ক বেশ আগেই হয়ে গেছে।’

দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর গ্রামের গরু ব্যবসায়ী মুল্লুক মালিথা বলেন, ‘গাংনী উপজেলায় ৩০ বছর ধরে গরু বেচাকেনার ব্যবসা করছি। আগে নৌকা করে আসতাম। সেতু নির্মাণ হওয়ার পর আর নৌকা চলে না। আবার সেতুর সংযোগ সড়ক নেই। এখন গাংনী এলাকায় আসতে হলে ৮/৯ মাইল ঘুরে আসতে হয়।’

থেমে আছে জমি অধিগ্রহণ, সেতু নির্মাণের ৬ মাসেও হয়নি সংযোগ সড়ক

গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙা গ্রামের কৃষক লিটন হোসেন বলেন, ‘নদীর এপার-ওপার দুদিকেই প্রায় ১৫ বিঘা জমি আছে। এতে সংগৃহীত সবজি দুই উপজেলার হাটে বিক্রি হয়। যখন নদীতে সেতু ছিল না, তখন নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতেন। এখন তাও পারছেন না। সবজিবোঝাই ভ্যানগাড়ি আট কিলোমিটার ঘুরে আসতে হচ্ছে। এতে খরচ ও ভোগান্তি দুটোই বাড়ছে।’

গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙা গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী নাহারুল ইসলাম বলেন, ‘আগে সেতু ছিল না নৌকায় যাতায়াত করে দুই উপজেলার বিভিন্ন হাটে সবজি বিক্রি করতাম। এখন সেতু হয়েছে কিন্তু রাস্তা নাই। ফলে ৯ কিলোমিটার ঘুরে বিভিন্ন হাটে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমাদের মত ছোট ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির যেন শেষ নাই।’

স্থানীয় জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুর নিচ দিয়ে আমাদের প্রায় ৩৫ বিঘা জমি আছে। সেতু হলে মানুষের ভোগান্তি কমে যাওয়ার পাশাপাশি জায়গাগুলোর দামও বেড়ে যাবে। তাই ন্যায্যমূল্য পেলে সেতুর সড়কের জন্য জমি দিতে আপত্তি নেই তার।’

গাংনী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, সেতু নির্মাণের আগে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। তবে বর্তমান সেতুর কাজ শেষ করে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গেলে যারা জমি দিতে চেয়েছিলেন তারা বর্তমানে আপত্তি জানাচ্ছেন। তারা বাজারমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দাম চাচ্ছেন। তাই ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি।’

মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, এখানকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি সেতু এবং সে সময় স্থানীয় জমিদাতারা জমি দিতেও সম্মত হয়েছিলেন। তবে সেতু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর তারা এখন বেঁকে বসেছেন। তবে জেলা প্রশাসন এরই মধ্যে জমির মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আইনানুযায়ী সব ব্যবস্থা নেবে।

আসিফ ইকবাল/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।