৮ বছর ধরে স্টেশনে নেই কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী, থামে না ট্রেনও
কিশোরগঞ্জের ভৈরব কালিকাপ্রসাদ রেলস্টেশনে একটা সময় জনসমাগম ছিল। সকাল হতেই প্ল্যাটফর্মে ভিড় করতেন যাত্রীরা। এখান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ রুটে ঈশা খাঁ, চিটাগাং মেইল, ৩৮সহ চারটি ট্রেন চলাচল করতো। এসব ট্রেনে চড়ে প্রতিদিনই এ অঞ্চলের কয়েক হাজার যাত্রী গন্তব্যে যেতেন। কিন্তু আট বছর আগে কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় সেই যৌবন হারিয়েছে স্টেশনটি।
থামে না কোনো ট্রেন। আসেন না যাত্রীরা। স্টেশন মাস্টারসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রুমেও ঝুলছে তালা। ফলে চুরি হচ্ছে স্টেশনের সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কালিকাপ্রসাদ স্টেশনে একসময় ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিল। কিন্তু কার্যক্রম বন্ধের কারণে এখন আর কেউ থাকেন না। আট বছর আগে এ স্টেশনের মাস্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন শরিফুল ইসলাম। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে কর্মজীবন থেকে তিনি অবসরে যাওয়ার পর থেকেই এ স্টেশনের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে।
যদিও পরবর্তীতে কালিকাপ্রসাদ রেলওয়ে স্টেশনে মঈনুল ইসলাম নামের একজন মাস্টার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু যোগদানের কিছু দিন পরই কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে বদলি করা হয়। এরপর থেকেই স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছেন অবসরপ্রাপ্ত রেলওয়ে কর্মী ফজলুর রহমান।

তিনি জানান, ১৯১৫ সালের ২০ জানুয়ারিতে অবসরে যান তিনি। অবসর সময় কাটাতে নিজ কর্মস্থল ত্যাগ না করে স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। থাকেন স্টেশনের পাশের একটি মসজিদে আর খাবারের ব্যবস্থা করেন কর্মজীবনের স্থানীয় এক সহকর্মী। তবে স্টেশনটি বন্ধ থাকার কারণে প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটছে। কয়েক দিন আগে স্টেশনে থাকা কয়েকটি ট্রলির চাকা চুরি হয়ে গেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রাকিব মিয়া বলেন, আট বছর আগে এ স্টেশনটি অনেক জনবহুল ছিল। সকাল হলেই লোকজন স্টেশনে এসে জড়ো হয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষায় থাকতেন। কিন্তু স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এখন কোনো ট্রেন থামে না।’
জেড রহমান প্রিমিয়াম ব্যাংক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জিহাদ রহমান হামিম বলেন, ‘ছোটবেলায় আব্বু আম্মুর সঙ্গে এ স্টেশন থেকে প্রায়ই চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ গিয়েছি। কিন্তু বড় হওয়ার পর এ স্টেশনে কোনো ট্রেন না থামায় কোথাও যাওয়া হয়নি। তবে মাঝে মধ্য এ স্টেশনে একটি লোকাল ট্রেন থামে। সেটি দিনের বেলায় তাদের ইচ্ছে হলে থামে। তবে স্টেশন থেকে এ ট্রেনের জন্য কোন টিকিট কাটার কোনো ব্যবস্থা নেই।’

স্থানীয় বাসিন্দা রিয়াদ মিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে আমাদের চলাফেরার ক্ষেত্রে এখান থেকে অনেক দূরদূরান্তে যেতে হয়। কিন্তু স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ট্রেনে যাতায়াত করতে পারছি না। ছোটবেলায় বাবা-মার সঙ্গে এ স্টেশন থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। সরকারের কাছে আমাদের দাবি বন্ধ থাকা স্টেশনটির কার্যক্রম পুনরায় চালু করলে কয়েক হাজার বাসিন্দার যাতায়াতে দুর্ভোগ শেষ।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভৈরব অফিসের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিগনাল) সোলাইমান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, কালিকাপ্রসাদ রেলস্টেশনটির কার্যক্রম কয়েক বছর আগে কর্তৃপক্ষ বন্ধ ঘোষণা করেছে। কারণ এই স্টেশন থেকে টিকিট বিক্রির টাকায় কর্মচারীর বেতনও উঠতো না। শুধু কালিকাপ্রসাদ নয় নরসিংদীর রায়পুরার শ্রীনিধি ও কিশোরগঞ্জ যশোদলপুর রেলস্টেশনও কর্তৃপক্ষ অনেক আগেই বন্ধ করে দিয়েছে।
এসজে/জিকেএস