পঞ্চগড়ে ১৯ বছর পর খুলছে চারদেশীয় ব্যবসায়ীক সংযোগ


প্রকাশিত: ১২:৩২ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গরুপে চালুর মাধ্যমে খুলে যাচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ভূটান ও নেপালের মধ্যে চারদেশীয় ব্যবসায়ীক সংযোগ। বৃহস্পতিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে এই স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। এতদিন এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের মধ্যে শুধুমাত্র পণ্য পরিবহন হতো।

১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই স্থলবন্দরের পথচলা শুরু হয়। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব.) বিজয় কুমার সিংহ তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন বলে দুপুরে জেলা প্রশাসন আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।
 
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ইমিগ্রেশন সুবিধাসহ বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে ভারতের শিলিগুড়ি, ভূটানের ফুয়েন্টসলিং এবং নেপালের বিরাটনগর এলাকার সঙ্গে বাংলাদেশের চতুর্দেশীয় বাণিজ্যিক সংযোগের দ্বার উম্মোচন হবে।

ইমিগ্রেশন সুবিধা চালুসহ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হলে পাসর্পোটধারীরা এই বন্দর দিয়ে নিয়ম মেনে সড়কপথে যাতায়াত করতে পারবেন। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাবান্ধা হবে চার দেশের মধ্যে চলাচলের জন্য গুরুত্বর্পূণ সংযোগস্থল। এই এলাকায় বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভূটান-ভারত-নেপাল) নামে চারদেশীয় শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছেন এফবিসিসিআই।

স্থানীয় শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের আশা, বাংলাবান্ধার মাধ্যমে পঞ্চগড় এবং উত্তরাঞ্চলসহ গোটা দেশের অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে যেতে পারে। এদিকে পঞ্চগড় বিবিআইএন এর সদর দফতর করার পরিকল্পনার কথা জানান ব্যবসায়ী নেতারা।

পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের ছয়টি স্থলবন্দর দিয়ে জনসাধারণ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যাতায়াত করতে পারেন। এগুলো হলো, লালমনিরহাটের বুড়িমারী, দিনাজপুরের হিলি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ, যশোরের বেনাপোল, সাতক্ষীরার ভোমরা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট।

বাংলাবান্ধা চালু হলে এটি হতে দেশের সপ্তম স্থলবন্দর। যেখান দিয়ে মানুষ পাসর্পোটের মাধ্যমে যাতায়াত করতে পারবেন।

এছাড়া বাংলাদেশ, ভূটান, ভারত এবং নেপালের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন। এই অঞ্চলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রসারে ভৌগলিক গুরুত্ব বিবেচনায় ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ও ভারতের ফুলবাড়ী স্থলবন্দরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের উদ্বোধন করেন বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি ঢাকায় ভারত ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের মাধ্যমে জনসাধারণের চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে আঞ্চলিক বাণিজ্য প্রসারে চার দেশের মধ্যে যান চলাচলেরও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে করে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ওই চারটি দেশের সড়কপথের দূরত্ব অনেক কমে যাবে। পাশাপাশি চার দেশের মধ্যে সড়কপথে যোগাযোগসহ বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা বাড়বে।

জানা যায়, বাংলাবান্ধা থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার। এছাড়া বাংলাবান্ধা থেকে ভারতের শিলিগুড়ি শহরের দূরত্ব ৯ কিলোমিটার এবং দারজিলিং শহরের দুরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, নেপালের কাকভিটার দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার এবং ভূটানের ফুটেন্টসলিং শহরের দূরত্ব হবে মাত্র ৬৮ কিলোমিটার। সড়কপথে ঢাকা থেকে বগুড়া-রংপুর-পঞ্চগড় হয়ে সহজেই ভারতের ফুলবাড়ী যাওয়া যাবে এবং সেখান থেকে ভূটান এবং নেপালেও সহজে যাতায়াত করা সম্ভব হবে। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক বিদেশি পর্যটক নেপাল, ভূটান ও ভারতের দার্জিলিং শহরে বেড়াতে যান।

অন্যদিকে এসব দেশ থেকে অনেকেই বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, পতেঙ্গা, কুয়াকাটাসহ অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এই চেকপোস্ট চালু হলে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে।

পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফুল আলম পাটোয়ারী বলেন, বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু হলে ভারতের শিলিগুড়ি, ভূটানের ফুয়েন্টসলিং এবং নেপালের বিরাটনগর এলাকার সঙ্গে বাংলাদেশের চতুর্দেশীয় বাণিজ্যিক সংযোগের দ্বার খুলে যাবে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাবান্ধা চারদেশের মধ্যে চলাচলের জন্য গুরুত্বর্পূণ সংযোগস্থল। এই এলাকায় বিবিআইএন নামে চারদেশীয় শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। এর সদর দফতর পঞ্চগড়ে করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন এফবিসিসিআই।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান খান বাবলা বলেন, আমরা ১৯ বছর ধরে বাংলাবান্ধায় ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এর জন্য অপেক্ষা করছি। অবশেষে সেই আশা পূরণ হতে চলেছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনের পর সহজেই চার দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে। বাংলাবান্ধা থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার। এছাড়া বাংলাবান্ধা থেকে ভারতের শিলিগুড়ি শহরের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার এবং দার্জিলিং শহরের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, নেপালের কাকভিটার দূরত্ব ৬১ কিলোমিটার এবং ভূটানের ফুটেন্টসলিং শহরের দূরত্ব হবে মাত্র ৬৮ কিলোমিটার। এসব এলাকার মানুষ নানান প্রয়োজনে খুব সহজে যাতায়াত করতে পারবেন।

পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জেনারেল (অব.) বিজয় কুমার সিংহ তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন। এজন্য সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

এমএএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।