এক বিদ্যালয়ে তিন শতাধিক মৌচাক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৮:১৪ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২২

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নে অবস্থিত চৌদ্দঘড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই ভবনের চারদিকের কার্ণিশ, জানালার সানশেড, বারান্দার বাড়তি অংশসহ ভবনের চারপাশের গাছের ডালে ডালে ঝুলছে অসংখ্য মৌমাছির চাক। বিদ্যালয়টির দ্বিতল ভবনের বিভিন্ন অংশে বসেছে ছোটবড় ৬০টি মৌচাক।

ভবনের সামনে বেশ কয়েকটি শিমুল, কাঁঠাল, আমগাছসহ একটি নারিকেল গাছে বসেছে শতাধিক মৌচাক। এসব গাছের কোনোটা রয়েছে ভবনঘেঁষে। এছাড়া ভবনের পেছন ও পশ্চিম পাশের গাছগুলোতেও রয়েছে শতাধিক মৌচাক। এসব মৌচাকের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। মৌমাছির ভয়ে বিদ্যালয়টির সামনের পথ দিয়ে চলাচল বন্ধ করেছে স্থানীয়রা।

jagonews24

স্থানীয় এবং বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন মৌমাছি কোনো কোনো মানুষকে তাড়া করে এবং হুল ফোটায়। এ কারণে সবাই আতঙ্কে থাকেন।

শুধু বিদ্যালয়টিতেই নয়, গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতেও বসেছে একাধিক চাক। সবমিলিয়ে ছয় শতাধিক মৌচাক বসেছে এলাকাটিতে।

স্থানীয়রা জানান, চরাঞ্চলের ওই এলাকাটিতে এই সময় ব্যাপক সরিষার চাষ হয়। এই সরিষার মধু সংগ্রহ করতেই প্রতিবছর নভেম্বর মাসে এখানে মৌমাছির আগমন ঘটে। আশপাশে বনজঙ্গল না থাকায় এই বিদ্যালয় এবং পাশের গাছ-গাছালিতে চাক বসায় তারা। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার চাকের সংখ্যা অনেক বেশি।

jagonews24

বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আব্দুর রহমান বলে, ‘অসংখ্য মৌমাছি সবসময় উড়াউড়ি করে। এসব মৌমাছি অনেক সময় হুল ফুটিয়ে দেয়। ভয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা বন্ধ করেছে। আমারও স্কুলে আসতে ভয় লাগে।’

বিদ্যালয়ের পিয়ন সোহেল রানা বলেন, ‘প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে ক্লাসরুম খুলে দিয়ে অফিসের জানালা-দরজা বন্ধ করে ভেতরে থাকি। বিদ্যালয়ের বারান্দা এবং অফিসের সঙ্গেও মৌমাছি চাক বসিয়েছে। মাঝে মধ্যে ধোঁয়া দিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।’

প্রধান শিক্ষক মিন্টু চন্দ্র সেন জানান, প্রতিবছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মৌমাছির উপদ্রব সহ্য করতে হয়। এবার মৌচাকের সংখ্যা অনেক বেশি। বিদ্যালয় ভবন এবং আশপাশের গাছ মিলে তিন থেকে সাড়ে তিনশ মৌচাক বসেছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, এবার সরিষার চাষ বেশি হওয়ায় মৌমাছির চাকের সংখ্যাও বেড়েছে। শুধু বিদ্যালয়ে নয়; আশপাশের অনেক বাড়িতেও চাক বসেছে। এমনকী আমার বাড়িতেও ছয়টি চাক বসেছে। সবমিলিয়ে এলাকায় ৫০০-৬০০ চাক রয়েছে।

jagonews24

তিনি বলেন, এসব চাক থেকে স্থানীয়রা মধু সংগ্রহ করলেও ক্ষতির পরিমাণটাই বেশি। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া আশ্বাস দেন তিনি।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, সরিষার চাষ বেড়ে যাওয়ায় ওই অঞ্চলে মৌমাছি আসছে। চাক দিচ্ছে। সেসব চাক থেকে মধু সংগ্রহ করা যাচ্ছে। এটা একটা ভালো দিক যা স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।

ফজলুল করিম ফারাজী/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।