ইজিবাইক নিয়ে আনইজি শেরপুরবাসী

ইমরান হাসান রাব্বী ইমরান হাসান রাব্বী , শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:২৮ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২

ব্যাটারিচালিত অনিয়ন্ত্রিত ইজিবাইকই ও অটোরিকশা এখন গলার কাঁটা শেরপুরবাসীর। একদিকে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের বেপরোয়া চলাচল অন্যদিকে শহরের প্রধান সড়কটির বেহাল দশা ও ফুটপাত দখলের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে অসহনীয় যানজট।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে লাইসেন্স প্রদান, লাইসেন্সবিহীন ও ইউনিয়ন থেকে শহরে আসা ইজিবাইকের কারণে কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না যানজট। এজন্য দ্রুত ফুটপাত দখলমুক্ত করাসহ ইজিবাইক-অটোরিকশা চলাচল শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সম্প্রতি একসঙ্গে দশ হাজারেরও বেশি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে নম্বর প্লেট দিয়েছে শেরপুর পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ। এজন্য যান প্রতি আদায় করা হয়েছে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। লাইসেন্স প্রদানের পর যানজট নিরসনে স্থায়ী উদ্যোগের কথা থাকলেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই শেরপুর পৌর কর্তৃপক্ষের। শহরে চলাচলের জন্য ইজিবাইক ও অটোরিকশাগুলোকে জোড়-বেজোড় সংখ্যা এবং সাদা ও কমলা রঙে বিভক্ত করা হলেও লাইসেন্সপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ইজিবাইকের কারণে যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী।

পৌরসভাসহ এর সঙ্গে লাগোয়া পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের লাইসেন্সকৃত ইজিবাইক ও অটোরিকশা রঙ ভেদে একদিন পরপর শহরে চলাচলের কথা থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষের মনিটরিং না থাকায় ইচ্ছামতো চলাচল করছে যানবাহনগুলো। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ও অদক্ষ চালকের বেপরোয়া চলাচলের কারণেও সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এছাড়া ফুটপাত দখল করে হকাররা বিভিন্ন দোকানপাট বসিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা ও অফিস শুরুর সময়ে শহরে যানজট চরম আকার ধারণ করছে। শব্দদূষণ ও যানজটের ভোগান্তিতে পড়েছেন শেরপুরবাসী।

শহরের খরমপুর মহল্লার বাসিন্দা জুলফিকার হাসনাত হাসু বলেন, শহরের নিউমার্কেট থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে এখন সময় লাগে ২০-২৫ মিনিট। অথচ দেড় কিলোমিটারের এই রাস্তাটুকু যাতায়াতে সময় লাগার কথা মাত্র ৫-৭ মিনিট। এতে আমাদের সময়ের অপচয় হচ্ছে।

আরেক বাসিন্দা সুলতান মাহমুদ বলেন, শহরে জনসংখ্যার তুলনায় ইজিবাইকের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। প্রতিটি ইজিবাইকে মাত্র এক-দুজন যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মোড়সহ যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামার জন্য জ্যাম লেগেই থাকে।

শিক্ষার্থী সানিয়া বলেন, আমাদের স্কুলে যাওয়ার জন্য ক্লাস শুরুর ৪০-৪৫ মিনিট আগে বের হতে হয়। জ্যামের কারণে অনেক সময় ক্লাসে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়। আমরা শিক্ষার্থীরা খুব বিপাকে আছি।

এদিকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড় কলেজমোড়, খরমপুরম, নিউমার্কেট, থানামোড়, গোয়ালপট্টি মোড় ও খোয়ারপাড় শাপলাচত্বর এলাকায় অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে এই ইজিবাইকই এখন ভোগান্তির অন্যতম কারণ শেরপুরবাসীর।

নাগরিক প্লাটফরম জনউদ্যোগ, শেরপুরের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের ছোট শহরে সরু রাস্তা। এখন শহরে রাস্তার তুলনায় গাড়ি বেশি। ফুটপাত একদিকে দখলমুক্ত হলে অন্যদিকে দখল শুরু হয়। তাই শহরের যানজট নিরসনে প্রশাসন ও পৌরসভার যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

জেলা পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. রুবেল মিয়া জানান, শহরের যানজট নিরসনে আমরা ভোর ছয়টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বড় ও মাঝারি গাড়ি প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছি। এছাড়া অবৈধ ইজিবাইক ও অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। শহরে যানজট নিরসনে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছি।

এ ব্যাপারে শেরপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন বলেন, নিয়ম বহির্ভূতভাবে ইউনিয়ন পরিষদ ইজিবাইক ও অটোরিকশার লাইসেন্স দিচ্ছে। সবার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সীমিতসংখ্যক ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করার কথা থাকলেও সে নিয়মটি মানা হচ্ছে না। এটির কারণে শহরে যানজট বাড়ছে। আমরা মাঝে-মধ্যেই অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ইজিবাইক জব্দ করছি। আশা করছি শিগগিরই শহরে যানজট কমবে।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।