ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল
বেড না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় শিশুরোগীরা

ঠাকুরগাঁওয়ে জেঁকে বসেছে শীত। তীব্র শীতের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীতে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে ছিন্নমূল-দরিদ্র মানুষ ও শিশুরা। একই সঙ্গে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। আক্রান্ত হচ্ছে সব বয়সী মানুষরা। তবে বেশি বিপাকে পড়েছে শিশুরা।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগে প্রতিদিন ধারণক্ষমতার পাঁচ গুণের বেশি শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। শয্যা কম থাকায় হাসপাতালের ওয়ার্ডের মেঝেতে রেখে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক হাসপাতালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা থেকে ফারুক ইসলাম ও তার স্ত্রী এসেছেন ১৫ মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে। ফারুক ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে বেশ কয়েকদিন থেকে বাচ্চাটা অসুস্থ। ১৫ জানুয়ারি এই হাসপাতালে তাকে ভর্তি করি। এখন সে কিছুটা সুস্থ।
আরও পড়ুন: জন্মের ২ মাসে মেয়ের মৃত্যু, এবার মায়ের কোলে একসঙ্গে এলো ৩ সন্তান
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়ন থেকে অসুস্থতার জন্য শাহিনা তার ১৫ দিন বয়সী মেয়ে খাদিজাকে ভর্তি করান। তিনি বলেন, আমি কাশি ও সর্দিতে আক্রান্ত ও আমার মেয়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। ১০ জানুয়ারিতে হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করি কিন্তু রোগীর অতিরিক্ত চাপ থাকায় বেড পাইনি। তাই ফ্লোরে বিছানা করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার গণপূর্ত গ্রামের সাজেদুল করিম বলেন, আমার আড়াই মাসের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক। ঠান্ডার কারণে সর্দি ও এলার্জি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। দুই দিন হলো হাসপাতালে ভর্তি করেছি।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের শাহানাজ পারভিন নামে এক গৃহবধূ বলেন, তিনদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আমার ছেলেকে নিয়ে। আগের থেকে এখানকার চিকিৎসা অনেক ভালো ও উন্নত হয়েছে। তারপরেও এখানে বেডের সমস্যা রয়েই গেছে। বেডের অভাবে অনেক রোগীকে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। যদি বেডের সংখ্যা বাড়ানো হতো তাহলে আমাদের জন্য আরও ভালো হতো।
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সাজ্জাত হায়দার শহিন বলেন, এ এলাকায় প্রচণ্ড শীত হওয়াতে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের এখানে শিশু ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা ৪৫ জনের হলেও বর্তমানে প্রতিদিন দুই শতাধিক শিশু ভর্তি থাকছে। এদের মধ্যে সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। শীতের সময় বিশেষ করে শিশু ও নবজাতকের ঠিকমতো যত্ন না নেওয়ার ফলে এধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই শীতে গরমকাপড়ের ব্যবহার বৃদ্ধিসহ শিশুদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে।
আরও পড়ুন: শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে পাবনা, বেড়েছে শীতজনিত রোগী
আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নাঈম মো. মিনহাজ কৌশিক বলেন, হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা ২৫০ জনের হলেও বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৫০-৪০০ জন রোগী ভর্তি থাকছেন। এদের বেশির ভাগ রোগী ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগে ১০০ শয্যার হাসপাতালে যে জনবল ছিল এখন ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল তেমন বাড়ানো হয়নি। জনবলের ঘাটতি এবং শীতে অতিরিক্ত রোগীর চাপেও এখানকার চিকিৎসা সেবা স্বাভাবিক আছে। সীমিত সামর্থ্যর মধ্যেই আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
তানভীর হাসান তানু/জেএস/এমএস