‘ভুল বাটনে’ চাপ, যমুনা সার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ০৫:৫৬ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২৩

দেশের সর্ববৃহৎ ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানায় (জেএফসিএল) বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ভুল বাটনে চাপ লেগে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে কারখানা সূত্রে জানা গেছে। এতে চলতি ভরা মৌসুমে বন্ধ হয়ে গেছে কারখানার ইউরিয়া ও অ্যামোনিয়া উৎপাদন। 

এ ঘটনায় সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

কারখানা সূত্র জানায়, সম্প্রতি যমুনা সার কারখানার অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের এনজি বুস্টার কমপ্রেসারে মাত্রাতিরিক্ত নাইট্রোজেন অপচয়সহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। এনজি বুস্টার ক্রয় ও পুনঃস্থাপনের জন্য বিষয়টি আন্তর্জাতিক কোম্পানি ইঞ্জারসোল-রেন্ড (ইন্ডিয়া) লিমিটেডকে জানায় কর্তৃপক্ষ। পরে রোববার (২২ জানুয়ারি) ইঞ্জারসোল-রেন্ড কর্তৃপক্ষ এনজি বুস্টার কমপ্রেসার পরিদর্শনের জন্য তাদের ভারতীয় ডেপুটি ম্যানেজার (সার্ভিস) তানাজি এস পন্দেকারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম পাঠায়।

আরও পড়ুন: ৬ মাস পর যমুনা সার কারখানায় উৎপাদন শুরু

টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন ইঞ্জারসোল-রেন্ডের টেরিটরি ম্যানেজার (সার্ভিস) ইমামুল সর্দার এবং মার্কেটিং প্রতিনিধি কসমো মার্কেটিং কনসালট্যান্টস প্রাইভেট লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম।

কারখানার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ভারতীয় বিশেষজ্ঞ তানাজি এস পন্দেকার রোববার বিকেলে কারখানার অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের এনজি বুস্টার কমপ্রেসারের বিভিন্ন প্যারামিটার পরিদর্শন করছিলেন। এসময় তিনি একটি ভুল বাটনে চাপ দিলে বিকট আওয়াজে অ্যামোনিয়া প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যায়। এতে মুহূর্তেই ইউরিয়া সার ও অ্যামোনিয়াম উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

বিকট আওয়াজে কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি প্রথমে ‘স্বাভাবিক’ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও সোমবার সকাল থেকে এলাকায় জানাজানি হয়।

আরও পড়ুন: পলিথিন-প্লাস্টিক থেকে তৈরি হবে ডিজেল-বিদ্যুৎ-সার

এ বিষয়ে কারখানার ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (এমটিএস) আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি ও কারখানার মেশিনারিজ প্রধান ভূপতি চন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে ভারতীয় বিশেষজ্ঞ তানাজি এস পন্দেকার এনজি বুস্টার কমপ্রেসারের বিভিন্ন প্যারামিটার ঘুরে দেখছিলেন। এসময় কারখানার কিছু কর্মচারী ওভারটাইম সংশ্লিষ্ট কিছু জটিলতা নিয়ে আমার কাছে আসেন। আমি তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলছিলাম। এসময় ভূপতি চন্দ্র বিশ্বাস অ্যামোনিয়া শিফট ইনচার্জ ফজলুল হককে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে থাকার জন্য বলেন। বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটের সময় অ্যামোনিয়া কমপ্রেসার বন্ধ হয়ে যায়। এতে অ্যামোনিয়া ও ইউরিয়া সার উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।’

এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। কমিটির প্রধান করা হয়েছে দুর্ঘটনার সময় পরিদর্শকের সঙ্গে থাকা আফাজ উদ্দিনকে। আগামী তিনদিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: সার আমদানিতে এলসির মেয়াদ বাড়লো

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খানের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

গতবছরের ২১ জুন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এতে অ্যামোনিয়া ও ইউরিয়া সার উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ছয় মাস বন্ধ থাকার পর গত ২০ ডিসেম্বর ইউরিয়া উৎপাদন শুরু হয়।

নাসিম উদ্দিন/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।