১২ বছর ধরে পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসটি এখন মাদকের আখড়া

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০২:৫১ পিএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাদকদ্রব্যের খালি কৌটা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত জমিদার বাড়ির অংশবিশেষ এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর একটি ভবন মুড়াপাড়া কলেজের আবাসিক ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে দেড় যুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সেই ভবনটি।

ঐতিহাসিক প্রাচীন এ স্থাপনাটি অযত্ন, অবহেলা আর সংরক্ষণের অভাবে জৌলুস হারিয়েছে অনেক আগেই। জরাজীর্ণ ধ্বংসাবশেষ ভবনটি এখন বখাটে আর মাদকসেবীদের দখলে। রাত-দিন ভবনে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৮৮৬ সালে তৎকালীন রামরতন ব্যানার্জী মুড়াপাড়ায় জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়ির পাশেই পাইক-পেয়াদের থাকার জন্য আলাদাভাবে ছয় কক্ষবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেন। জমিদাররা দেশ ছেড়ে চলে গেলে ১৯৬৬ সালে বাড়িটিতে মুড়াপাড়া কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার একমাত্র কলেজ ছিল এটি।

jagonews24

কলেজ কর্তৃপক্ষ জমিদারদের পাইক-পেয়াদের ভবনটি ছাত্রদের আবাসিক হল হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেন। একসময় কলেজটিতে রূপগঞ্জসহ দেশের দূরদূরান্ত থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে থেকে লেখাপড়া করতো। কিন্তু নানা জটিলতায় দেড় যুগ ধরে ছাত্রাবাসটি বন্ধ।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাচীন এ স্থাপনা ভঙ্গুর অবস্থায় পড়ে আছে। খসে পড়ছে ছাদ ও দেওয়ালের পলেস্তারা। দেওয়ালজুড়ে বেয়ে উঠছে লতাপাতা। ভবনের দরজা-জানালা কিছুই নেই। সব কিছু খুলে নিয়ে গেছে সংঘবদ্ধ চোরের দল। খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভবনের ইট-পাথরও। স্থাপনাটির বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের খালি কৌটা।

স্থানীয়রা জানান, দিনে বখাটেদের আনাগোনা আর রাতে চলে মদ-গাঁজা, ফেনসিডিলের আসরসহ নানা অপকর্ম। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে। ইতিহাসের সাক্ষী স্থাপনাটি আবারো মেরামতের দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় মুড়াপাড়া সরকারি কলেজের সাবেক ছাত্র আজমল হোসেন বলেন, ‘১৯৯৫-৯৬ সালে ভবনটি ছাত্রাবাস ছিল। দূরদূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা এখানে থেকে মুড়াপাড়া কলেজে পড়াশোনা করতো। দিন দিন আশপাশে বিভিন্ন কলেজ স্থাপিত হয়েছে। এতে আবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। ছাত্রাবাসটি পুনরায় সংস্কার করা গেলে দূরদূরান্তের শিক্ষার্থীরা থাকতে পারতো। পাশাপাশি মাদকসেবীদের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া যেত।’

jagonews24

মঙ্গলখালি এলাকার বাসিন্দা নুরুমিয়া বলেন, ‘ছাত্রাবাসের পাশে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কেয়ারটেকারের চাকরির সুবাদে এখানেই থাকতে হয় আমাকে। দিন-রাত সমান তালে এ পরিত্যক্ত ভবনটিতে মাদকসেবীদের আনা-গোনা দেখা যায়। পরিত্যক্ত ও নির্জন হওয়াতে এখানে বখাটে আর মাদকসেবীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।’

সরকারি মুড়াপাড়া কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘জমিদার বাড়ির অংশবিশেষ এ স্থাপনাটি দীর্ঘদিন মুড়াপাড়া সরকারি কলেজের ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যাবহার হয়েছিল। কিন্তু সরকার থেকে লিজ নেওয়ার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ছাত্রাবাসটি বন্ধ হয়ে যায়। আইনি জটিলতা শেষ হলেই ভবনটি সংস্কার করে পুনরায় ছাত্রাবাস চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসে মাদকের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এখন যেহেতু জানলাম বাড়িটির প্রতি আমাদের বিশেষ দৃষ্টি থাকবে। কোনো মাদকসেবী পেলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।