ইয়াবাসহ অটোরিকশা আটকের পর টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশিত: ০৯:৪১ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ইয়াবাসহ আটক একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়ে শুধু মাদক মামলা করার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কসবা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার কিছুটা আগে উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও মোড়ে মাদক উদ্ধারে অভিযান চালান কসবা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মুখলেছুর রহমান। অভিযানে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা তল্লাশির জন্য আটক করা হয়। এসময় চালকসহ অটোরিকশায় থাকা তিন যুবকের মধ্যে একজন দৌড়ে পালিয়ে যান। পুলিশ অটোরিকশাচালক বাহার মিয়া ওরফে মনার শরীর তল্লাশি করে আন্ডারওয়্যারের ভেতর লুকানো ১৫২ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় বাহার মিয়া ওরফে মনা (৩০) ও তার সঙ্গে থাকা সোহেল মিয়া (২২) নামের আরেক যুবককে আটক করে পুলিশ। পাশাপাশি অটোরিকশা থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া হাকিমকে (২৯) আটক করা হয়। আটক তিনজনই জেলা শহরের গোকর্ণঘাট এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইয়াবার মূল মালিক হাকিম এবং সহযোগী মনা ও সোহেল। ঘটনাস্থলে জব্দ তালিকা করার পর স্থানীয় দুজনের সাক্ষী হিসেবে সই নিয়ে পুলিশ ইয়াবা, অটোরিকশাসহ আটক তিনজনকে থানায় নিয়ে আসে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, থানায় আসার পর চালক মনার বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। তার পরিবারের সদস্যরা গেলে মাদক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত অটোরিকশাটি ছাড়িয়ে নিতে অভিযানে থাকা এএসআই মুখলেছ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে রাতে ৩০ হাজার টাকা মুখলেছের হাতে দেওয়া হয়। এসময় মধ্যস্থতা করেন রাসেল নামের এক সোর্স।

টাকা পাওয়ার পর মধ্যরাতে অটোরিকশাটি ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরদিন (৫ ফেব্রুয়ারি) ১৫২ পিস ইয়াবাসহ হাকিমকে প্রধান আসামি করে চালক মনা ও সোহেলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন এসআই খায়রুল ইসলাম। আদালতে আসামিদের সঙ্গে পাঠানো হয় জব্দ তালিকা। সেই তালিকায় মাদকের কথা লেখা থাকলেও মাদক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত অটোরিকশার কথা উল্লেখ নেই। জব্দ তালিকায় সাক্ষী হিসেবে মো. জাহাঙ্গীর ও সাইফুল ইসলাম নামের দুজনের নাম ও সই রয়েছে।

জব্দ তালিকায় সাক্ষী হিসেবে থাকা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এএসআই মুখলেছ ভাই সাক্ষী হিসেবে আমার নাম দিয়েছেন। উনি আমার পূর্ব পরিচিত। আমি বাড়িতে ফেরার সময় সেদিন দেখা হয়। এসময় অটোরিকশাসহ তিনজনকে আটক করা হয়। তল্লাশি করে একজনের আন্ডারওয়্যারের ভেতরে ইয়াবা পাওয়া যায়। পরে অটোরিকশাসহ তিনজনকে তারা থানায় নিয়ে যান। তবে আমি সাক্ষী থাকতে চাইনি। মুখলেছ ভাই বলেছেন সমস্যা হবে না। আমার এলাকার জাহাঙ্গীর ভাইকেও সাক্ষী করা হয়।’

জাহাঙ্গীর নামে অপর সাক্ষী বলেন, ‘আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। পুলিশ ইয়াবা ও অটোরিকশাসহ তিনজনকে আটক করে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কসবা থানার এএসআই মুখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। আপনি এসআই খায়রুল সাহেবের সঙ্গে কথা বলুন।’

আপনিও তো এ অভিযানে খায়রুল সাহেবের সঙ্গে ছিলেন। আপনার হাতেই টাকা দেওয়ার প্রমাণ আছে, এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এ অভিযানের মামলার বাদী খায়রুল সাহেব। তেমন কিছু হয়নি। উনি ভালো বলতে পারবেন।’

এসআই খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সঙ্গে এএসআই মুখলেছ ছিলেন। কোনো অটোরিকশা আমরা পাইনি। ইয়াবাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘এটা ছিল ইয়াবার মামলা। তবে আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত অবগত নই। খোঁজ নিচ্ছি।’

আবুল হাসনাত মো. রাফি/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।