‘মাছ ধরার পাস’ নিয়ে সুন্দরবনে কাঁকড়া নিধন
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবনে অবাধে চলছে কাঁকড়া নিধন। মাছ ধরার পাস নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া নিধন চলে বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এতে সহযোগিতা করেন বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কয়েকটি সূত্র জানায়, সুন্দরবনের বিভিন্ন স্টেশন ও ক্যাম্পের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জেলেরা বনে প্রবেশ করেন। যারা বনবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে বনে প্রবেশ করে শুধু তারাই ধরা পড়েন।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে বাঘ গণনায় স্থাপিত আট ক্যামেরা গায়েব
কাঁকড়ার অন্যতম প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র সুন্দরবন। এখান থেকে আহরিত কাঁকড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়, যা থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে।

সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণকারী দাকোপ উপজেলার নলিয়ান, কালাবগি, কয়রার মহেশ্বরীপুর ও বাগালী এলাকার জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রজনন মৌসুমের দুই মাস ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে নোনা পানিতে ডিম ছাড়ে কাঁকড়া। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এ দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এসময় সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ। কিন্তু বনবিভাগের স্টেশন ও ফাঁড়ির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে গোপন চুক্তি করে মাছ শিকারের পাস নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে কাঁকড়া শিকার করছেন জেলেরা।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন সুরক্ষায় পৃথক মন্ত্রণালয় দাবি
কয়েকটি সূত্রের তথ্যমতে, খুলনা রেঞ্জের দাকোপের নলিয়ান ও কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ফরেস্ট স্টেশন এলাকায় কাঁকড়া ধরার একাধিক সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা নৌকাপ্রতি বনবিভাগকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে বনে প্রবেশ করেন। এজন্য কাঁকড়া ধরার সময় বনবিভাগ ও স্মার্ট টিম আর তাদের ধারেকাছেও আসেন না। ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা কোনো সময় সুন্দরবনে প্রবেশ করলে তা জেলেদের জানিয়ে দেওয়া। বর্তমানে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার জন্য শত শত নৌকা রয়েছে।

কাশিয়াবাদ স্টেশন এলাকার কাঁকড়া শিকারি মো. বাবুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়ার চাহিদা ও দাম বছরের অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। এজন্য শিকারিরা যে কোনো উপায়ে বনে প্রবেশ করে কাঁকড়া শিকার করেন। বর্তমানে এককেজি এফএফ-১ কাঁকড়ার মূল্য ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা। তবে দাম আরও বাড়তে পারে।’
আরও পড়ুন: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে মায়ের আঁচলে আগলে রেখেছে সুন্দরবন
তবে নলিয়ান ফরেস্ট স্টেশনের স্টেশন অফিসার শাহাদাত হোসেন দাবি করেন, সুন্দরবনে এখন কেউ প্রবেশ করতে পারছেন না। কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে জেলেদের বনে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি অপপ্রচার।
কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ বলেন, সুন্দরবনকে যারা লুটপাট করে খেতে পারছেন না তারাই অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এসময়ে কাউকে বনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। চুরি করে কেউ প্রবেশ করলেও তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ১০০ বছরে সুন্দরবনের আয়তন কমেছে ৪৫১ বর্গ কিমি
খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু সালেহ মো. মোহাসিন হোসেন বলেন, প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই সুন্দরবনে এখন প্রবেশ করার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, প্রযু্িক্তর মাধ্যমে সুন্দরবনকে সব সময় তদারকি করা হচ্ছে। চাইলেই কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। সব জায়গায় ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
কাঁকড়া ধরার সঙ্গে বনবিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।
এসআর/জেআইএম