প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদবাগান সেজেছে ৩০০ প্রজাতির ফুল-ফলে

এমদাদুল হক মিলন এমদাদুল হক মিলন , দিনাজপুর দিনাজপুর
প্রকাশিত: ০৭:২০ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

দিন যত যাচ্ছে দিনাজপুরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদগুলোতে বাগান করার প্রবণতাও বাড়ছে। পছন্দ অনুযায়ী টবে লাগানো হচ্ছে ফুল ও ফল গাছের পাশাপাশি শাকসবজিও। বাহারি ফুলে ছাদগুলো দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীরাও পরিচিত হচ্ছে শত শত ফুলের সঙ্গে।

শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা এমনই একটি স্কুল ফুলবাড়ী উপজেলার বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়ের ছাদবাগান দৃষ্টি কাড়ছে শিক্ষার্থীসহ এলাকার মানুষ ও কর্মকর্তাদের। এই স্কুলের ছাদবাগানে রয়েছে দেশি-বিদেশি তিন শতাধিক ফুল-ফলের গাছ। যাতে ফুটেছে নানান রকম বাহারি ফুল। উৎপাদিত ফুল-ফল-সবজির সমারোহ শোভা বাড়াচ্ছে ভবনের ছাদে।

jagonews24

আরও পড়ুন- তেজপাতা চাষে সফল ফুলবাড়ীর রহমত আলী

আগে শুধু শহরাঞ্চলেই শখের ছাদবাগান দেখা যেত। তবে এখন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার প্রাথমিক স্কুলগুলো ছাদবাগানে সাজছে। এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। তাদের যৌথ প্রয়াসেই বর্তমানে উপজেলার ১০৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অনেকগুলোতে গড়ে উঠেছে দৃষ্টনন্দন ছাদবাগান। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকায় ছাদগুলোও ডেমেজ হচ্ছে না। ফলে আয়ু বাড়বে ছাদগুলোর।

ফুলবাড়ী উপজেলার বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের টিফিন শেষে অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থী ছাদবাগানের পরিচর্যা করছেন। শুধু ছাদ নয়, স্কুলটির পুরো ক্যাম্পাসে সারি করে লাগানো আছে ফুল ও ফলের গাছ।

jagonews24

ছাদবাগানে রয়েছে সিজনাল ফুল পিটুনিয়া, ভারবেনা, ক্যালেন্ডুলা, পেঞ্জি, স্টক, এস্টার, চন্দ্রমল্লিকা, গ্যাজানিয়া, এনকা গাদা, ফ্লক্স, হলিহক, বারমাসী ফুল, নীলমনিলতা, গোল্ডেন শাওয়ার, সীলভার কুইন, ক্যামেলিয়া। ফলের মধ্যে রয়েছে বারমাসী কাঁঠাল, কাটিমন আম, লেবু, কুল, সবেদা, বেল, কলা, ইত্যাদি।

আরও পড়ুন- নজর কেড়েছে ফুলবাড়ীর শহীদ মিনার

এছাড়া ওষুধী গাছ, সবজি, জারবেরা, রুবেলিয়া, নাইট কুইন, রুসেলিয়া, পাতাবাহার কৈলাস সুন্দরী, বিভিন্ন মানি প্লান্ট, কামরাঙ্গা, আনার, কমলা, মাল্টা, ড্রাগন ফল, আমড়া, লাউ, ক্যাপসিকাম, লেবু, সাদা এলাচসহ বিভিন্ন প্রকারের গাছ রয়েছে।

শিক্ষকরা বলছেন, ছাদবাগান শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি বৃক্ষ ও প্রকৃতির প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলছে। ছাদবাগানে কাজ করে আনন্দ পেয়ে অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়মুখী হয়েছে। তারা শত শত দেশি–বিদেশি ফুল-ফলের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠছে।

jagonews24

বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র বাধন রায় জানায়, তার বাড়ির চেয়ে স্কুলেই বেশি ভালো লাগে। কারণ স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে সে বাগানে সময় কাটাতে পারে। গাছগুলোতে ফুল বা ফল এলে তার অনেক আনন্দ হয়। গাছে পানি দিতে আর পরিষ্কার রাখতে তার ভালো লাগে। স্কুলে খেলার জিনিস আর বাগান থাকায় বাড়ি যেতে ইচ্ছা করে না।

পঞ্চম শ্রেণির আরেক ছাত্রী নুসরাত জাহান জানায়, আগে তার স্কুলে আসতে ইচ্ছা করতো না। এখন ছাদে বাগান হওয়ার পর স্কুলের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। ক্লাস শেষে বন্ধুদের নিয়ে সে বাগানে কাজ করে।

বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, মাঠের পাশে একটি ফুলবাগান করা হয়েছিল। কিন্তু স্কুলে সীমানা প্রাচীর না থাকায় সেই বাগান আমরা টেকাতে পারিনি। আগে এই স্কুলে ছাদবাগান ছিল না। শিক্ষকদের উদ্যোগে ছাদবাগান করা হয়েছে। বাগানের পরিচর্যা করতে শিক্ষার্থীরা অনেক আগ্রহী। স্কুলের পরিবেশ রক্ষায় বাগানগুলো ভূমিকা রাখছে।

আরও পড়ুন- টমেটো চাষে ব্যস্ত দিনাজপুরের কৃষক

তিনি বলেন, বাগানে যে টবগুলো দেখছেন এগুলো আমাদের নিজেদের তৈরি। স্কুল নির্মাণকারী ঠিকাদার আমাদেরকে সিমেন্ট, বালি ও চুন দিয়ে সহায়তা করেছেন। আমরা শিক্ষকরা নিজেরাই টবগুলো তৈরি করেছি।

বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইতি আরা বলেন, আমাদের প্রধান শিক্ষকের ইচ্ছা ছিল ছাদবাগান করার। আমরা সবাই মিলে ছাদবাগান করেছি। আমাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও বাগানের পরিচর্যা করে। এতে তাদের মধ্যে বৃক্ষপ্রেম সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি বিদ্যালয়ের পরিবেশ ভালো রাখা এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে ছাদবাগানের উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।

jagonews24

কথা হয় বারাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্না রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল যখন স্কুলে ছাদ হবে তখন ছাদে একটি সুন্দর বাগান করবো। এই বাগান করতে স্কুলের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সহযোগিতা করেন। এই বাগানে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান। যিনি নিজের হাতে টবগুলো বানিয়েছেন। করোনাকালে, রমজানে, পূজায় বিভিন্ন সময় স্কুল যখন ছুটি থাকে তখনও তিনি প্রতিনিয়ত স্কুলে এসে ছাদবাগানের পরিচর্যা করেন। আমরা শিক্ষার্থীদেরকে ছাদে নিয়ে এসেও ক্লাস করাই।

তিনি আরও বলেন, ২৪শ’ স্কয়ার ফিটের ছাদবাগানে ৩০০ প্রজাতির ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোসাম্মাৎ হাছিনা ভূঁইয়া বলেন, ৫২নং বারাই আদর্শ সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাজে আমি অভিভূত। আমি ছোটবেলা থেকেই গাছপ্রেমী। এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকে দেখছি তারা ছাদবাগান, দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার করেছে। এই উপজেলার আরও কিছু বিদ্যালয়ে ছাদবাগান রয়েছে তবে এরা সেরাটা করেছে। আমি সব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশে বলবো যে স্কুলের ছাদগুলো অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে সেগুলোতে আপনারাও বাগান করুণ। আমার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।