বরগুনার স্বাবলম্বী তিন নারীর গল্প

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ১১:৫৮ এএম, ০৯ মার্চ ২০২৩

নারীরাও এখন আশার আলোকবর্তিকা হয়ে অবদান রাখছেন উপকূলীয় জেলা বরগুনার অর্থনীতিতে। নিজেকে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে অনেক নারী উদ্যোক্তার মাসিক আয় লাখ টাকার ওপরে। তাদের দেখদেখি অনেক বেকার নারীই নতুন স্বপ্ন দেখছেন।

বরগুনা জেলায় হস্ত ও কুটির শিল্প থেকে শুরু করে নানারকম ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত হয়েছেন নারী উদ্যোক্তারা। এসব নারীরা নিজেদের আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি অনেক বেকার শিক্ষিত নারীর কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন।

বরগুনা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের গগন আলী সড়ক এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হক হাওলাদারের মেয়ে সুলতানা রাজিয়া পলি একজন হস্তশিল্প উদ্যোক্তা। করোনা পরবর্তী সময় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নিজের মেধা দিয়ে কাঠের তৈরি হস্ত ও কুটির শিল্পের প্রসার ঘটিয়েছেন বিদেশেও। নিজের বাড়িতে বসেই বিক্রি করছেন এসব পণ্য। ডিজিটাল হস্তশিল্পের ব্যানারে অনলাইনে তার পণ্য বিক্রি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। কাঠের তৈরি বাহারি হস্তশিল্প নিয়ে তিনি এরইমধ্যে ভ্রমণ করার সুযোগ পেয়েছেন লন্ডন ও সিঙ্গাপুরে। এছাড়া দেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের কর্মশালা ও মেলায় তার অংশগ্রহণ রয়েছে।

সরেজমিনে তার বাড়িতে গেলে সুলতানা রাজিয়া পলি বলেন, বর্তমান সময়ে নারীদের পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। নিজেকে স্বাবলম্বী করার চিন্তা থেকে প্রথমে বিভিন্ন নকশায় তৈরি হাতপাখা দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। পরে প্রসার বাড়িয়ে কাঠ দিয়ে বাহারি হস্তশিল্প তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করি।

তিনি আরও বলেন, উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরামের (উই) মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে ৫০ হাজার টাকার আর্থিক সহযোগিতা পেয়ে আমার স্বপ্ন পূরণ করাটা আরও সহজ হয়। এখন দেশ এবং দেশের বাইরে আমার পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রি হয়।

বরগুনা পৌরশহরে পুরুষের পাশাপাশি দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন অনেক নারী। তাদের মধ্যে ২ নম্বর গৌরিচন্না ইউনিয়নের সোনালী পাড়া এলাকার মো. কুদ্দুস খানের মেয়ে মোসা. পারভিন আক্তার চালাচ্ছেন খুশি-নিশি লেডিস ভ্যারাইটিজ ফ্যাশন হাউজ। বালিকা বিদ্যালয় সড়কে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গেলে পারভিন আক্তার বলেন, ছয় বছর আগে ধারদেনা করে চার লাখ টাকা দিয়ে এবং বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য বাকিতে নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। এখন দোকানে প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল আছে। প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হয় এখন। তবে প্রথমে নারী হয়ে ব্যবসা শুরু করায় পরিবারের সদস্যরাসহ এলাকার অনেকেই বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি।

তিনি নারীদের শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে তার মতো উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেন।

বরগুনা পৌরশহরের ডিকিপি রোড এলাকার মৃত আবুল কালামের মেয়ে আসমা আক্তার সেতু বাগানবাড়ি এলাকায় রাঙা বউ লেডিস বিউটি পার্লারের কর্ণধার। তিনি বলেন, নিজ উদ্যোগে সফলতার সঙ্গে রাঙিয়ে নিয়েছি আমার জীবন। প্রথমে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও দীর্ঘ ১২ বছরের চলমান প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে সাত থেকে আটজন নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও এখন প্রতিষ্ঠানে মালামাল রয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকার।

তিনি আরও বলেন, অনেক নারী উদ্যোক্তা হয়ে স্বাবলম্বী হতে চাইলেও আর্থিক সমস্যায় আবার পিছিয়ে যায়।

বরগুনা জেলা বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক কাজী তোফাজ্জেল হক বলেন, নারীদের বিষয়ে বিসিকের উদ্যোগ রয়েছে। কেউ যদি আমাদের থেকে সহযোগিতা পেতে চান তবে নিয়ম অনুযায়ী সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন। তাছাড়া বিসিক থেকে শতকরা ৩০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সহযোগিতা পাবেন।

এ বিষয়ে বরগুনা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মেহেরুন নাহার মুন্নি জাগো নিউজকে বলেন, নারীদের জীবনমান উন্নয়নে ও নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে আমরা কাজ করছি। নারীদেরকে স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। নারীদের সবরকম সহায়তার আশ্বাসও দেন তিনি।

মো. আব্দুল আলীম/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।