আধিপত্য বিস্তারে ক্যাম্পে পরিকল্পিত আগুন: তদন্ত কমিটি
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারে পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আগুন দেওয়া হয়েছে। এতে ২ হাজার ৮০৫টি শেল্টার পুড়ে গেছে। বসবাস করা ১৫ হাজার ৯২৬ রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। আহত হয়েছেন ২১২ জন। জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত কমিটির হস্তান্তর করা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। একই সঙ্গে ঘটনার অধিক তদন্ত করতে মামলাসহ ১২টি সুপারিশ করেছে কমিটি।
রোববার (১২ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান। এরপর জেলা প্রশাসনের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
এ সময় তদন্ত কমিটির সদস্য ক্যাম্প ইনচার্জ, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এনএসআই কক্সবাজারের উপ-পরিচালক, এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে পুড়লো ২ হাজার ঘর
তদন্ত কমিটির প্রধান আবু সুফিয়ান বলেন, ‘৫ মার্চ বিকেলে অগ্নিকাণ্ডের পর গঠিত সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি ৬ মার্চ থেকে কার্যক্রম শুরু করে। সরেজমিন পরিদর্শনকালে ৭৫জনের সাক্ষাতকার ও লিখিত নেওয়া হয়েছে। এক কথায় আমরা সব মহলের সঙ্গে কথা বলে যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হয়েছি যে, আধিপত্য বিস্তার করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আগুন দেওয়া হয়েছে। তবে কে বা কারা আগুন লাগিয়েছে তা তদন্ত কমিটি নিশ্চিত হতে পারেনি। যেহেতু আগুন লাগার আগের রাতেও দু’পক্ষের গোলাগুলি হয়েছে।
আবু সুফিয়ান আরও বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ এ ধরনের ঘটনা এড়াতে ১২টি সুপারিশ উপস্থাপন করেছি। সেসবের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রথম এবং প্রধান সুপারিশ হলো ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে মামলা করা। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অধিক তদন্ত করে অপরাধীদের চিহ্নিত করতে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবে।
তদন্ত কমিটির ১২ সুপারিশ
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাশকতা বিবেচনায় একটি মামলা করা যেতে পারে এবং নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চিরুনি অভিযান পরিচালনা ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে।
১০ লক্ষাধিক এফডিএনএনদের জন্য স্বতন্ত্র এক বা একাধিক ফায়ারবিগ্রেড ইউনিট এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার কেন্দ্রে স্থাপন করা যেতে পারে। কারণ, আগুনের ঘটনা অনেকটা নিয়মিত।
শেল্টারের ত্রিপল ও বাঁশ ব্যবহারের পরিবর্তে বিকল্প শেল্টার উপকরণ ব্যবহারের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন যা অপেক্ষাকৃত কম দাহ্য পদার্থের তৈরি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকে প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসে গাড়ি সহজে চলাচল করতে পারবে।
ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যত্রতত্র মার্কেট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বড় রাস্তার ধার ব্যতীত অন্যকোনো স্থানে দাহ্য পদার্থের আউটলেট করা থেকে বিরত রাখা।
প্রতিটি ব্লকের কেন্দ্রে বা রাস্তার পাশে কংক্রিটের পানির চৌবাচ্চা বা জলাধার নির্মাণ করা এবং বর্তমানে ব্যবহৃত ওয়াটার নেটওয়ার্কে হাইড্রেন্ট পয়েন্ট রাখা।
শেল্টারগুলো অধিক ঘনবসতিপূর্ণ ও অনেক স্থান যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অগম্য বিবেচনায় ক্যাম্পে প্রবেশমুখে ক্যাম্পের একসেস রোড উল্লেখপূর্বক মানচিত্র স্থাপন করা যেতে পারে।
ক্যাম্পে কোথাও আগুন লাগলে নেভাতে রোহিঙ্গাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য তাদের নিয়মিত ফায়ার ফাইটিং প্রশিক্ষণ দেওয়া।
এফডিএমএন ক্যাম্পের ব্লকগুলোতে বিভিন্ন পয়েন্টে ওয়ারলেস টাওয়ার স্থাপন করে সেখানে একইসঙ্গে ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে নজরদারি বাড়ানো যেতে পারে।
এক ক্যাম্পে অপরাধ করে অন্য ক্যাম্পে যাতে পালিয়ে যেতে না পারে এজন্য প্রতিটি ক্যাম্পে পৃথকভাবে কার্যকর নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করা যেতে পারে।
আগুনের সূত্রপাতের সঙ্গে সঙ্গে শেল্টারগুলো থেকে গ্যাস সিলিন্ডার সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও এসি সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ।
গাইডলাইন অনুযায়ী ক্যাম্প ১১-তে শেল্টার নির্মাণ করা হয়নি। অর্থাৎ এক শেল্টারের থেকে অন্য শেল্টারের ন্যূনতম দুরুত্ব ৬ ফুট থেকে ১০ ফুট রাখার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। ভবিষ্যতে গাইডলাইন ভালোভাবে অনুসরণ করে শেল্টার নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সায়ীদ আলমগীর/এসজে/জিকেএস