যশোরে পৌর মেয়রকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি যশোর
প্রকাশিত: ০৫:৩৩ পিএম, ১৭ মার্চ ২০২৩

যশোরের ঝিকরগাছার পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামালকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ ১৫ মার্চ পৌরসভা কার্যালয়ে ঢুকে এ হুমকি দেন বলে দাবি করেছেন মেয়র।

শুক্রবার (১৭ মার্চ) দুপুর ১২টায় যশোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ অভিযোগ করেন।

ঝিকরগাছা পৌরসভার মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল বলেন, এ ঘটনায় তিনি ঝিকরগাছা থানা পুলিশ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা আওয়ামী লীগকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তার সঙ্গে পৌরসভার ১১ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে তিনি পৌর পরিষদে মিটিং করেন। পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল বলেন, ১৫ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি পৌরসভায় নিজ কার্যালয়ে থাকার সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদ কক্ষে ঢুকে সবাইকে বের করে দেন। অফিস কক্ষে ঢোকার মুখে ৭-৮ ক্যাডারকে কক্ষের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখেন। এরপর তাকে গালিগালাজ করেন এবং গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।

মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল জানান, সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু মুছা মাহমুদ নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে তার অফিসে ঢুকে সরকারি কাজে বাধা ও গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।

হত্যার হুমকির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, শহরের সাবেক বোটঘাট এলাকায় পাঁচ শতকের একটি সরকারি সম্পত্তি ডিসিআর না কেটেই মুছা মাহমুদের নেতৃত্বে ব্যক্তি স্বার্থে দখল করে নেওয়া হয়েছে। এতদিন তালাবদ্ধ থাকলেও সেটা খোলা অবস্থায় দেখে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। এর ঘণ্টা খানেক পর এসে মুছা মাহমুদ হত্যার হুমকি দিয়ে যান।

তবে হুমকির বিষয়টি সত্য নয় দাবি করে মুছা মাহমুদ বলেন, ওই জমি আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত অফিসের। যুবলীগ নেতা ইলিয়াস হোসেনসহ কয়েকজন অফিস খুললে পৌর মেয়র সেখানে গিয়ে তাদের গালিগালাজ করেন। সেখানে পৌর মেয়র ব্যক্তিগত অফিস বানাতে চান। এ বিষয় জানতে তিনি পৌরসভায় মেয়রের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্ত মেয়র পিস্তল বের করে তাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন। এসব বিষয় উল্লেখ করে তিনি ঘটনার পরদিন ১৬ মার্চ ঝিকরগাছা থানায় জিডি করেন।

তবে মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল বলেন, ওই সম্পত্তিতে আওয়ামী লীগের অফিস করার জন্য তারাই চেষ্টা করছেন। ডিসিআর প্রাপ্তির জন্য তিনিসহ স্থানীয় এমপি ডা. নাসির উদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগ নেতা রমজান শরীফ বাদশা যৌথ স্বাক্ষর করে আবেদন করেছেন। গুলি করে হত্যার হুমকির বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিতে এখানে আওয়ামী লীগের অফিস প্রসঙ্গটি আনা হচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে মেয়র আরও বলেন, মুছা মাহমুদ আওয়ামী লীগের লেবাসধারী সন্ত্রাসী। ২০১০ সালে তিনি শার্শা থানার তৎকালীন ওসিকে পিটিয়েছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মুছা মাহমুদের ক্যাডারদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা, বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বাপ্পী, মাগুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ প্রমুখ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলেন, মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মুছা মাহমুদ সাধারণ সম্পাদক। আমরা উভয়ের কাছ থেকে ঘটনা শুনেছি। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ঝিকরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত বলেন, পৌর মেয়রের অভিযোগ পেয়েছি। দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মিলন রহমান/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।