মামলায় নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না গাড়ির গতি

এন কে বি নয়ন এন কে বি নয়ন
প্রকাশিত: ০৮:৫১ পিএম, ২০ মার্চ ২০২৩

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ফরিদপুরে প্রায় সব সড়কেই যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় পাঁচগুণ। সে অনুপাতে বাড়েনি জনবলসহ অন্য সাপোর্ট। ফলে পুরোনো কাঠামোর জনবল দিয়েই বাড়তি কর্মচঞ্চলতাকে সামলাতে হচ্ছে হাইওয়ে পুলিশকে। ফলে মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনার হার। এমন পরিস্থিতিতে মামলা দিয়েও গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না পুলিশ।

মাদারীপুর রিজিওনের অধীনে ২০২২ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২৩ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত ২২২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু নিয়মিত মামলা হয়েছে ৩৭টি। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৬৪ জন এবং আহত হয়েছেন ৩০৭ জন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিওনে সাতটি থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্প রয়েছে। যার মাধ্যমে আটটি মহাসড়কের ৩৮১ কিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এসব মহাসড়কে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি স্টেশনে দুটি করে মোট ১৬ স্পিডগ্যান রয়েছে। ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৯ মার্চ পর্যন্ত ওই রিজিওনের অধীনে চেকপোস্ট বসিয়ে আট হাজার ৯২টি মামলা রুজু করা হয়। যার মধ্যে ৩ হাজার ৪৯২টি মামলাই অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো সংক্রান্ত।

হাইওয়ে পুলিশের দাবি, যানবাহনগুলোকে মামলা দিয়েও কমানো যাচ্ছে না অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা। গতি কমাতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

ফরিদপুরে অবস্থিত মাদারীপুর হাইওয়ে রিজিওনের দায়িত্বরত পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই রিজিওনের অধীনে এন-৮, এন-৮০৫, এন-৮০৪, এন-৭, এন-৮০৬, আর-৭১০ ও আর-৮৬০ মহাসড়কের ৩৮১ কিলোমিটার মসহাসড়ক রয়েছে। যার মধ্যে এক্সপ্রেসওয়েও অন্তর্ভুক্ত।

রিজিওনের পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সহকারী পুলিশ সুপারের দপ্তরসহ আটটি থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্পে আগে থেকেই মোট জনবল রয়েছেন ২৬৫ জন। যার মধ্যে পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত ৬০ জন। আর ১৫ জন রয়েছেন প্রধান কার্যালয়ে প্রেষণে।

পুলিশ স্টেশনগুলোর মধ্যে পাংশা হাইওয়ে থানায় সর্বনিম্ন ২১ জন এবং ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় সর্বোচ্চ ৩৪ জন কর্মরত। বেশিরভাগ থানায়ই একজন ওসি, একজন সার্জেন্ট ও একজন উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তা। যার মধ্যে শুধু এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তাই দুর্ঘটনাজনিত মামলার তদন্ত করতে পারেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু করা হয়। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর এসব মহাসড়কে যানবাহনের চলাচল বেড়েছে তিন থেকে পাঁচগুণ। যানচলাচল বৃদ্ধি ও পুলিশের ব্যস্ততা বাড়লেও এসব পুলিশ স্টেশনগুলোতে বাড়েনি জনবল। এমনকি আটটি স্টেশনে মাত্র দুটি করে স্পিডগ্যান থাকায় এবং জনবল বৃদ্ধি না করায় একাধিক চেকপোস্ট পরিচালনা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কারণ এসব স্টেশনের অধীনে সর্বনিম্ন শিবচর হাইওয়ে থানার অধীনে ২৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে যার উভয় প্রান্ত বিবেচনায় ৫৬ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার অধীনে ৭৮ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে।

মাদারীপুর হাইওয়ে রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম জানান, মহাসড়কে যান চলাচলে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ চালকই তা মানছেন না।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। পাশাপাশি মালিক-কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্ট্যান্ড-টার্মিনালে পৌঁছানোর চাপই দায়ী। দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানোর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরোনো সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।