শেয়ারবাজার

নোয়াখালীতে লেনদেন নেই বললেই চলে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নোয়াখালী
প্রকাশিত: ০৭:২২ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২৩

নোয়াখালীতে লেনদেন না থাকায় ব্রোকারেজ হাউজের শাখাগুলোতে চলছে নিভু নিভু ভাব। এখানে ব্রোকারেজ হাউজের শাখা ১০টি। এর মধ্যে শাহ মো. সগির অ্যান্ড কোং নামে একটি প্রতিষ্ঠান চার বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি নয়টিতেও চলছে লেনদেনের খরা। লেনদেন নেই বললেই চলে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহ মো. সগির অ্যান্ড কোং নোয়াখালীতে শেয়ার ব্যবসায় অনেক সাফল্য দেখায়। এতে উঠতি বয়সী তরুণ-যুবক, গৃহিণী, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ঝুঁকে পড়েন শেয়ারবাজারে। ২০১৯ সালে হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুঁজি আটকে অনেকে এখন দিশেহারা।

আরও পড়ুন: শেয়ারবাজার ছাড়ছেন রাজশাহীর বিনিয়োগকারীরা

বর্তমানে জেলার মাইজদীতে আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেড, এনএলআই সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ওয়ান সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং চৌমুহনীতে ইউনাইটেড ফাইন্যান্সিয়াল ট্রেডিং, এনসিসি বিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড, ব্র্যাক-ইপিএল স্ট্রক ব্রোকারেজ হাউজ, শেলটেক ব্রোকারেজ লিমিটেড, প্রাইম ফাইন্যান্স লিমিটেড ও ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজ লিমিটেড।

আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম সুমন জাগো নিউজকে বলেন, শেয়ার ব্যবসা এখন ক্রান্তিকাল পার করছে। একসময় তিন হাজার ৭০০ গ্রাহকের লেনদেন সামাল দিতে হিমশিম খেতে হতো। আর এখন লেনদেন নেই বললেই চলে।

আরও পড়ুন: ফেরেনি সুদিন, কাটেনি আতঙ্ক

এনএলআই সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মো. আবু সাঈদ জাগো নিউজকে বলেন, একসময় আমি বন্ধ হওয়া শাহ মো. সগির অ্যান্ড কোং এর ব্যবস্থাপক ছিলাম। বর্তমানে এনএলআইতে কাগজে-কলমে ৫০০ গ্রাহক থাকলেও ১০০ জনও লেনদেন করেন না। বাজার নিম্নমুখী হওয়ায় সবাই এ ব্যবসা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।

নোয়াখালীতে লেনদেন নেই বললেই চলে

একইভাবে ইউনাইটেড ফাইন্যান্সিয়ালের ব্যবস্থাপক মো. মোজাম্মেল হোসেন, ব্র্যাক-ইপিএলের মো. ডালিম, শেলটেকের মো. স্বপন, ইউনিক্যাপের মো. বোরহান উদ্দিন নিজেদের প্রতিষ্ঠানে আগের তুলনায় লেনদেনে ধস নেমেছে বলে উল্লেখ করেন।

কলেজছাত্র মো. আরাফাত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, একসময় বন্ধুদের পরামর্শে বাবার সঞ্চয়ের টাকা ও আত্মীয়-স্বজনদের থেকে ধার করে প্রায় তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করি। এখন মার্কেট নিম্নমুখী হওয়ায় লাভ তো দূরে থাক আসল টাকা পাওয়ায়ই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে!

আরও পড়ুন: শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী কমেছে ৫৭ শতাংশ

শাহনাজ নামে এক গৃহিণী বলেন, প্রবাসে থাকা স্বামীকে তার এক বন্ধু অল্পদিনে অধিক লাভের লোভ দেখিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেন। এখন স্বামীর ওই বন্ধুকে ফোন দিলেও ধরেন না।

নোয়াখালীতে লেনদেন নেই বললেই চলে

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার বড় বাজার হিসেবে সদরের মাইজদী ও বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে নয়টি ব্রোকারেজ হাউজের কার্যালয় রয়েছে। তবে অনেক কার্যালয়ের ভাড়া পরিশোধ করাও এখন দুষ্কর হয়ে পড়েছে। কর্মচারীর বেতন তো বকেয়া রয়েছেই।

আরও পড়ুন: শেয়ারবাজারে আস্থা হারিয়েছেন ময়মনসিংহের গ্রাহকরাও

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রোকারেজ হাউজের শাখাগুলোয় এখন ১০ শতাংশ সদস্যও লেনদেন করেন না। শত কোটি টাকা আটকা পড়ায় পুঁজি হারানোর শঙ্কায় হাজারো গ্রাহক। এমন পরিস্থিতিতে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের হস্তক্ষেপ চান গ্রাহকরা।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ইকবাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, অনেকে না বুঝে কোম্পানির খোঁজ-খবর না নিয়ে অল্প সময়ে লাভবান হতে বিনিয়োগ করে বসে আছেন। শেয়ারবাজার আগে বুঝতে হবে। না বুঝে বিনিয়োগ করলে তা হারানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে, যা নোয়াখালীতে বেশি দেখা যাচ্ছে।

ইকবাল হোসেন মজনু/এসএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।