শতকোটি টাকায় কূপ খনন করে মিললো না গ্যাস

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ০৪:৫৭ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২৩

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় কূপ খননে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত পাওয়া যায়নি। ১০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্ধারিত গভীরতা থেকে আরও ১০০ ফুট বেশি খননের পরও গ্যাসের কোনো লক্ষণ পায়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)।

পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স শরীয়তপুর সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মেঘনা নদীর তীরে শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি থেকে খুলনা পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে দ্বিমাত্রিক ভূকম্প জরিপ (টুডি সিসমিক সার্ভে) করা হয়। ওই জরিপে নড়িয়া উপজেলার চামটা ইউনিয়নের দিনারা গ্রামে ভূগর্ভে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল।

এখানে কূপ খননের কাজ শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের নভেম্বরে। খনন প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। অনুসন্ধান কূপ খননের জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ৬ দশমিক ৪৯ একর জমির হুকুম দখল নেওয়া হয়। ওই জমিতে থাকা ফসলের দু’বছরের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল।

sh-(3).jpg

তবে মেয়াদকাল ফুরানোর আগেই গ্যাস কূপ খননের কাজ সমাপ্ত হয়ে যায়। সেখান মাটি ও বিভিন্ন পদার্থের টেস্ট করেও গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই শরীয়তপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প-১ এর প্রকল্পের সব কর্মকর্তা কর্মচারী এ স্টেশন থেকে সব ধরনের খনন যন্ত্র নিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, খননের সেই কর্মযজ্ঞ এখন আর নেই। অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নিয়ে চলে গেছেন অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। সবাই ছুটছেন নোয়াখালীর আরেকটি গ্যাসের অনুসন্ধানের কূপ খনন করতে। তবে গ্যাস না পাওয়ার খবরে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা যায়।

দিনারা গ্রামের বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, আমার ৬৬ শতাংশ জমি বাধ্য হয়ে দিয়েছিলাম। তবে বিনিময়ে কি পেলাম। জমির খাজনার টাকা দিয়ে কী হবে। জেলার ভেতরে দিনার বাসিন্দা হয়ে নিজেকে খুব গর্ব করতাম। আজ আমাদের জনগণের এতগুলো টাকা বিফলে গেলো। এর দায় কার? আমি খুব দুঃখ পেয়েছি। আমি চাই ভালো করে দেখা হোক এখানে গ্যাস আছে কি না। যদি নাই পায় তাহলে কে গ্যাস মজুত থাকার তথ্য দিলো। জনগণের টাকা দিয়ে তামাশা শুরু করেছে।

sh-(3).jpg

এ বিষয়ে বাপেক্স মহাপরিচালক ও শরীয়তপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প-১ এর অ্যাডমিন নুর ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এ বিষয় আমি বেশি কিছু জানি না। কূপ খননের মাপের চাইতেও ১০০ ফুট মোট ৩ হাজার ৩০০ ফুট গভীর খনন করে এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েও গ্যাসের কোনো সন্ধান এখানে পাওয়া যায়নি। তাই আমরা নোয়াখালী কূপ খননের স্টেশনে যাবো।

এ বিষয়ে বাপেক্স মহাপরিচালক ও শরীয়তপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প-১ এর প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. তোফায়েল উদ্দিন সিকদার (তুষার) জাগো নিউজকে বলেন, আমরা নড়িয়ার চামটায় গ্যাসের অনুসন্ধানে কূপ খনন কাজ শেষ করতে পেরেছি। তবে এখানে কোনো গ্যাস মজুত নেই। বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি মার্চের শেষে এসে। এখানে গ্যাস সাপ্লাই দেওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। তাই এখানকার খনন যন্ত্রগুলো নিয়ে আমরা নোয়াখালী সুন্দরপুর-৩ প্রকল্প গ্যাস অনুসন্ধানে কূপ খনন স্টেশনে নেওয়া হবে।

বাপেক্সের প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) তোফায়েল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, কূপ খননের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী এখানে কোনো গ্যাসের মজুত নেই। তবে আবার রিভিজিট করবো। তখন এ প্রকল্পের ব্যাপারে বলা যাবে। আমাদের ৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রকল্প। বর্তমানে ডলারসহ সব কিছুর দাম বাড়ায় এখানে ১২০ কোটি টাকার মতো খরচ হতে পারে।

এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।