ঠাকুরগাঁওয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতায় স্কুলে মেয়েদের উপস্থিতি বেড়েছে
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার স্কুলগুলোতে স্বাস্থ্য সচেতনতার ফলে বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি বেড়েছে প্রায় ৯০ ভাগ। অথচ কিছুদিন আগেও এর পরিমাণ ছিল শতকরা ৫০ ভাগ।
রোগ জীবাণুর ভয়, আর কখনো নয়, এসো সবাই শুনি, স্বাস্থ্য বিধি মানি। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ক্লিনিকসমূহে চলছে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে ব্যাপক কার্যক্রম।
এক সময় গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতির সংখ্যা ছিল খুবই কম। নানা রকম শারীরিক অসুস্থতার কারণে নিয়মিত স্কুলে আসতে পারতো না অনেকে। সম্প্রতি এ উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতির এ চিত্র পাল্টে গেছে। এখন প্রতিদিন প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে বলে একাধিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সকল সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ ৩ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অবহিত করছেন। এরই ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি চর্চা চালু রেখেছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ইএসডিও এর সহযোগিতায় এবং ওয়াটার এইড বাংলাদেশের অর্থায়নে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় স্বাস্থ্যবিধিতে এসব পরিবর্তন এসেছে।
শাহাবাজপুর বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুই আক্তার জানায়, আমরা আগে জানতাম না ভালোভাবে হাত কীভাবে ধুতে হয়। এখন স্কুলে সুন্দরভাবে হাত ধোয়ার নিয়ম ও শরীর সুস্থ রাখার দিক নিয়মিত ক্লাসে বুঝানো হয়। ফলে এখন আমরা সুস্থ আছি। ক্লাসে শরীর সুস্থ রাখার নিয়মগুলো বাড়িতে আলোচনা করার ফলে পরিবারের লোকজনেরও অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে।
শিক্ষক সামাদ আক্তার জানান, আগে আমাদের স্কুলের ভালো ল্যাট্রিন ব্যবস্থা চালু ছিল না। এখন বেসরকারি সংস্থা ইএসডিও হাইজিন প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় প্রায় প্রতিটি স্কুলে সুন্দর ল্যাট্রিন ব্যবস্থা চালু করেছে। আর হাইজিনের ৫টি গুণের কথা নিয়মিত ক্লাসে উপস্থাপন করা হয় শিক্ষার্থীদের কাছে।
তিনি আরও জানান, আগে মেয়েরা ঋতু সংক্রান্তের কারণে নিয়মিত স্কুলে আসতো না। এখন স্কুলেই এসব উপকরণ রয়েছে। তারা এখন ঋতু সংক্রান্তের সমস্যা হলে স্কুলেই উপকরণগুলো ব্যবহার করছে। ফলে স্বাস্থ্য সচেতনতায় এগিয়ে যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
শাহাবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, উপজেলায় হাইজিন প্রকল্পে আমরাই প্রথম ১০০ ভাগ সফলতা অর্জন করেছি। আমাদের প্রতিটি শিক্ষার্থী এখন স্বাস্থ্য পরিচর্যায় সচেতন।
ঠাকুরগাঁও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আজাহার আলী জানান, হাইজিন প্রকল্পের আওতায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে সফলতা অর্জন করেছে। এই প্রকল্প যদি জেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে গ্রহণ করা হয় তাহলে জেলায় স্বাস্থ্য সচেতনতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে ইকো স্যোশাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) এর হাইজিন প্রকল্পের সমন্বয়কারী এনামুল হক জানান, আমরা ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় হাইজিন প্রকল্পের কাজ করে প্রাথমিক ভাবে সফলতা অর্জন করেছি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সচেতনতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। আগামীতে ইএসডিও জেলার সকল স্কুলে এই প্রকল্প চালু করবে বলে আশা প্রকাশ করছি।
রবিউল এহ্সান রিপন/এফএ/এমএস