দুই ছাত্রদল নেতা নিহত: খোকন-শিরিনসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নরসিংদী
প্রকাশিত: ০৮:২৯ পিএম, ২৭ মে ২০২৩
খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী শিরিন সুলতানা

নরসিংদীতে ছাত্রদলের দুইপক্ষের সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমানসহ দুই ছাত্রদল নেতা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩৫/৪০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।

নিহত ছাত্রনেতা সাদেকুর রহমানের ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় এই হত্যা মামলা করেন। মামলায় জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৭) বিকেল ৩টার দিকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম।

মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন। অন্য আসামিরা হলেন, খোকনের স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ, বিএনপির নেতা জায়দুল ইসলাম জাহিদ, ইলিয়াস আলী ভূইয়া, আল-আমিন, তানভির, রবিউল ইসলাম রবি, সোহেল, সাদ্দাম হোসেন ভূইয়া, মো. ওয়ালিদ হোসেন, রিফাত, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রউফ সরকার রনি, সাইফুল ইসলাম ভূইয়া, শামিম সরকার, শহর যুবদলের আহবায়ক চৌধুরী সুমন, যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, রুবেল হাসান, চিনিশপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আওলাদ হোসেন মোল্লা, সজিব, নাজমুল ভূইয়া, গোলজার হোসেন, শহিদুজ্জামান, শাকিল চৌধুরী, হানিফ সরকার, আল আমিন ওরফে হাদি, ইমাম মেম্বার, বাবুল খন্দকার, রাসেল মিয়া, কামাল হোসেন ভূইয়া। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩৫/৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গ্রেফতাররা হলেন, জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, বিএনপি নেতা কামাল হোসেন ও রাসেল।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর থেকে নিহত জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান ও ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাইনুদ্দিন ভুইয়ার সঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ ও সদস্যসচিব রিফাতের বিরোধ চলে আসছিল। বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রকাশ্যে নাহিদ ও রিফাতকে সমর্থন দিয়ে আসছেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়।

এদিকে, কমিটি ঘোষণার পর থেকে পদবঞ্চিতরা সাদেক ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি ও আন্দোলন করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সাদেক ও মাইনুদ্দিনের নেতৃত্বে পিকআপ ও শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা। বিক্ষোভ মিছিলটি চিনিশপুর বিএনপির কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল। মিছিলটি ভেলানগরপার হয়ে চিনিশপুর সড়কে প্রবেশ করা মাত্রই পূর্বপরিকল্পিতভাবে খায়রুল কবির খোকনের নির্দেশে আগে থেকে ওঁত পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা বিক্ষোভ মিছিলে ককটেল নিক্ষেপ করে। পরে তারা লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর হামলা করে অনেক নেতাকর্মীকে আহত করে।

ওই সময় দুর্বৃত্তরা সাদেকুর রহমানকে ঘেরাও করে কাছ থেকে তার মাথায় গুলি করে। এ ঘটনায় আশরাফুল নামে আরও একজনকে গুলি করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে জেলা হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাদেকুর মারা যান। এর একদিন পর শুক্রবার সকালে অপর ছাত্রদল নেতা আশরাফুল মারা যান।

দুই ছাত্রদল নেতা নিহত: খোকন-শিরিনসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিহত দুই ছাত্রদল নেতা

তবে নিহত সাদেকুর রহমানের ভাই মামলার বাদী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘মামলায় আমি কারও নাম দিইনি। কারণ, আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। ঘটনা আমার বাড়ির সামনে ঘটেনি। আমি ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে বলেছি আপনার তদন্তে যারা পড়ে তাদের নাম দেন। বিনা অপরাধে যেন কেউ মামলায় না পড়ে এই কথা বলে আমি এজাহারে সই দিয়ে এসেছি। আমি প্রশাসনের ওপর দায়ভার ছেড়ে দিয়েছি।’

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘বিএনপিকে দমন করতেই এমন মামলা করা হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকে পুলিশের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ও দলীয় কিছু নেতাদের মদদে তারা আমাদের ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে আসছে। এখন তারা নিজেরা নিজেরাই এসব ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে বলছে।’

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি আমাদের গাড়ি বহরে হামলা ও গুলি করা হলো। একাধিকবার দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করা হলো। কিন্তু পদবঞ্চিত নামধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা নেয়নি। যার কারণে তারা বারবার এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম বলেন, জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩৫/৪০ জনকে আসামি করে মামলা করেন নিহত সাদেকুরের ভাই আলতাফ হোসেন। এ ঘটনায় যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তবে মামলায় কোনো আসামির নাম না দেওয়ার বিষয়ে বাদীর দাবি অস্বীকার করেছেন ওসি। তিনি বলেন, বাদীর সই করা লিখিত এজাহারের ভিত্তিতেই মামলায় আসামি করা হয়েছে। এজাহার দেওয়ার পর কেন তিনি জানেন না সেটার জবাব তো আমি দেবো না। এই জবাব বাদী দেবে। ঘটনাস্থলে যারা ছিল তাদের সঙ্গে কথা বলে বাদী এজাহার দিয়েছে।

গত ২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। দীর্ঘ ১২ বছর পর ঘোষিত ওই কমিটিতে সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি ও মেহেদী হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া। প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় তার কর্মী-সমর্থকরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এর জেরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি মাইনুদ্দিনসহ তিন ছাত্রদল নেতাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

২৬ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার রাতেই পদবঞ্চিত নেতাদের ২০-২৫ জন সমর্থক জেলা বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শতাধিক প্লাস্টিকের চেয়ার, ব্যানার, প্রচারপত্র ও ফেস্টুনে আগুন লাগিয়ে দেন। ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের জানালা ও সিঁড়ির গ্লাস ভাঙচুর করেন। ৩০ জানুয়ারি বিকেলে ওই স্থানেই খায়রুল কবির খোকনের কুশপুতুল দাহ করেন তারা। ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে তারা বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন।

১১ ফেব্রুয়ারি সকালে শিবপুরের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইটাখোলা মোড়ে খায়রুল কবির খোকনের গাড়িবহরে গুলি ও ককটেল হামলার ঘটনাও ঘটে। ৫ এপ্রিল কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ও ইটপাটকেল ছোড়া হয়। সর্বশেষ ২০ মে আবার ইটপাটকেল ছুড়ে কার্যালয়ের কাচ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

সঞ্জিত সাহা/এমআরআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।