গরমে বিপর্যন্ত জনজীবন

চুয়াডাঙ্গায় লাইনে দাঁড়িয়ে এসি কিনছে মানুষ

হুসাইন মালিক
হুসাইন মালিক হুসাইন মালিক চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: ০৫:৫১ পিএম, ০৭ জুন ২০২৩

টানা বৃষ্টিহীন সময় পার করছে উত্তরের জেলা চুয়াডাঙ্গার বাসিন্দারা। এ কারণে বাড়ছে গরমের তেজ। এমন অবস্থায় ঘরেও স্বস্তিতে থাকার সুযোগ মিলছে না। আর তাই এই গরম থেকে মুক্তি পেতে লাইনে দাঁড়িয়ে এসি কিনতে দেখা গেছে লোকজনকে।

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসির শোরুমে নগদ ও ইন্সটলমেন্ট সুবিধায় এসি বিক্রি করছে কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে কিস্তি সুবিধার জন্য মধ্যবিত্তদের মধ্যে হঠাৎ বেড়েছে এসি কেনার হিড়িক। আর যারা সচ্ছল তারা এই তীব্র গরম থেকে মুক্তি পেতে নগদ টাকায় এসি কিনে বাড়ি ফিরছেন। বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় চুয়াডাঙ্গার কিছু শোরুমে এসির সংকট দেখা দিয়েছে।

jagonews24

চুয়াডাঙ্গার কয়েকটি ব্র্যান্ডের শোরুম ও দোকান ঘুরে দেখা গেছে, গরমের প্রভাবে অন্য সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ এসি বিক্রির বেড়েছে। আর কোম্পানিগুলো সব শ্রেণির ক্রেতার প্রতি লক্ষ্য রেখে ডিসকাউন্ট ও ক্যাশব্যাকসহ বিভিন্ন অফার দিচ্ছে। আর এতেই গ্রামের মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে কাস্টমার বেশি পাচ্ছে শোরুমগুলো।

শহরের ওয়ালটন, সনি-র্যাংগস, সিঙ্গার, মার্সেলসহ বিভিন্ন শোরুম ও ইলেকট্রনিকস পণ্যের দোকান ঘুরে দেখা যায়, সব দোকানেই মানুষের ভিড়। এর বেশিরভাগ লোকজন এসেছেন এসি ও চার্জার ফান কিনতে।

https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/ac-3-20230607175043.jpg

চুয়াডাঙ্গার শহরের সালেকীন ওয়ালটন প্লাজার শোরুমে এসি কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, এই প্রচণ্ড গরমে মানুষের কষ্টের শেষ নেই। আমিও গরম থেকে মুক্তি পেতে এসি কিনতে এসেছি। তবে শোরুমে সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে এসি নিতে হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদরের শ্রীকান্ত এসি কিনতে এসেছেন ওয়ালটনের শোরুমে। তিনি বলেন, আমরা এসি কিনতে এসেছি। এমনি প্রচণ্ড গরম। আমাদের লাইনে দাঁড়িয়ে এসি কিনতে হচ্ছে।

ওয়ালটন প্লাজা শোরুমের আইটি সেক্টরের কর্মকর্তা মাসুদ রানা। তবে অত্যাধিক এসির ক্রেতা থাকার কারণে তিনি সেলস এক্সিকিউটিভদের সাহায্য করছেন। তিনি বলেন, আমি এখানে বেসিক্যালি আইটি কনসালট্যান্ট হিসেবে আছি। ল্যাপটপ-কম্পিউটার বা আইটি সেক্টরটা দেখি। কাস্টমারের এত ভিড় যে, আমাদের শোরুমে কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছে। তাই আমি আমার সেক্টরে কাজ কম থাকায় এদের সাহায্য করছি। এসিতে প্রচুর কাস্টমার আসছে। ১০-১২ জন একসঙ্গে আসছে। আমরা এক এক করে তাদের এসি সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছি ও বিক্রি করছি।

jagonews24

ওয়ালটন চুয়াডাঙ্গা শোরুমের প্রিন্সিপাল অফিসার ইব্রাহীম খলিল বলেন, এবার গরম বেশি পড়াই এসির বিক্রি বেড়েছে। কাস্টমারদের সার্ভিস দিতে গিয়ে মোটামুটি হিমশিম অবস্থা। আমাদের সেলস এক্সিকিউটিভ যারা আছে, তারা এক প্রকার কাস্টমারদের লাইনে দাঁড়িয়ে বলতে পারেন এসি সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে ও বিক্রি করছে। আমরা ক্যাশে এবং ইন্সটলমেন্ট দুইভাবেই এসি বিক্রি করছি। কাস্টমার আসছে দুইভাবেই এসি কিনছে।

এ বিষয়ে ওয়ালটনের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান বলেন, সব শ্রেণির ক্রেতাকে টার্গেট করেই আমরা পণ্য বাজারজাত করে থাকি। আর এই গরমে এসির বিক্রি বেড়েছে। আমাদের শোরুমে পর্যাপ্ত এসি আছে। কাস্টমার আসলে আমরা সবসময় দিতে পারবো। আর বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান হলে সেল আরও বাড়বে।

দামুড়হুদা উপজেলা থেকে চুয়াডাঙ্গা শহরের সিঙ্গার শোরুমে এসি কিনতে আসা ড. গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, এত তাপদাহ যে এসি ছাড়া চলতেই পারবো না। সিঙ্গারের শোরুমে এসি কিনতে এসেছি। কিন্তু এই শোরুমে পর্যাপ্ত এসি নাই। সব শেষ হয়ে গেছে। আমাকে অন্য শোরুমে যেতে হবে।

jagonews24

সিঙ্গার শোরুমের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হামিদুর রহমান বলেন, এই তীব্র তাপপ্রবাহে শুধু এসি না ফ্যানের বিক্রিও বেড়েছে। আর আমাদের শোরুমের সব এসি শেষ। আমরা এসি দিতে পারছি না। আমি গত চারদিনে ৩৫টি এসি বিক্রি করেছি। কাস্টমার যখন আসছে, বলতে পারেন অনেকটা লাইনে দাঁড় করিয়ে তাদের সার্ভিস দিতে হচ্ছে।

বেস্ট ইলেকট্রনিকস ও মার্সেলের শোরুমে চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছিলেন খাইরুজ্জামান সেতু। তবে চার্জার ফ্যান না পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন এসি কিনবেন। তাই ঘুরে দেখছেন। তিনি বলেন, বর্তমান তাপদাহে মানুষের নাজেহাল অবস্থা। চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু তা মার্কেটে সংকট। যার কারণে আমি এসির দাম জানছি। সেরকম হলে একটা এসি নেবো।

বেস্ট ইলেকট্রনিকসের সেলস এক্সিকিউটিভ শামীম রেজা বলেন, এই দাবদাহের কারণে এসি ভালোই সেল হচ্ছে। এখনো যে গরম তাতে এসির ক্রাইসিস দেখা দিতে পারে।

বেস্ট ইলেকট্রনিকসের সহকারী ম্যানেজার রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, এসির চাহিদা বেশ। গরমের কারণে অন্য সময়ের চেয়ে বিক্রি বেড়েছে।

https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/ac-6-20230607175117.jpg

চুয়াডাঙ্গা শহরের মার্সেল শোরুমের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সাব্বির হাসান বলেন, আমাদের এসির কালেকশন ফ্রিজের মতো ওত না। কারণ এর বিক্রি কম। তবে অন্যবারের তুলনায় এসির বিক্রি ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মাইওয়ান-মিনিস্টার শোরুমের আলমডাংগা ব্রাঞ্চের সহকারী ম্যানেজার বিক্রম সাদিক মিলন বলেন, এখন আমরা প্রতিদিন এসি অর্ডার করছি। এপ্রিলের শুরু থেকে এসির গড় বিক্রি বেড়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ক্রেতাদের বাড়িতে এসি সংযুক্ত করে দিচ্ছি। ফলে তাদের বাড়তি কোনো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। ফলে এই বিক্রি আরও বাড়বে বলে মনে করছি।

এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।