লোডশেডিংয়ে ফিরছে হারিকেনের যৌবন

হুসাইন মালিক
হুসাইন মালিক হুসাইন মালিক চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: ০৪:৪৪ পিএম, ০৯ জুন ২০২৩

গত দুই সপ্তাহ ধরে চুয়াডাঙ্গায় মারাত্মক গরমের সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং। লোডশেডিংয়ের কারণে চার্জার লাইটগুলো ঠিকঠাক চার্জ দিতে না পারায় কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া কুপি বাতি ও হারিকেনের ব্যবহার বাড়িয়েছে মানুষ। লোডশেডিংয়ে মোমবাতির দাম অন্য সময়ের তুলনায় বেশি হওয়ায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা ঝুঁকছেন কুপি বাতি ও হারিকেনের দিকে।

বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে জানা যায়, অসহনীয় লোডশেডিংয়ে হারিকেনের বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা শহরের পুরাতন গলি মার্কেটে নিত্যকার সব জিনিস পাওয়া যায়। এই পুরো মার্কেট ঘুরে শুধু দুটি দোকানে পাওয়া গেলো হারিকেন। দু-চারজন ক্রেতার দেখাও মিললো।

হারিকেন ও কুপি বাতি বিক্রেতা নিউ নন্দন এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী সুমন পারভেজ খান বলেন, মূলত আমের এই সিজনে আমাদের হারিকেন বিক্রি হয়। তবে এবার লোডশেডিংয়ের কারণে কিছু মানুষ নিয়ে যাচ্ছে। এটা স্লো আইটেম, কম চলে। তারপরও আমরা রাখি। কাস্টমার যেহেতু চায়। এছাড়া কুপি বাতি বা ল্যাম্পও অনেকে নিয়ে যাচ্ছে।

মার্কেটে হারিকেন কিনতে আসা হুমায়ুন কবির রিমু বলেন, বিদ্যুৎ নেই এজন্য হারিকেন কিনতে আসলাম। ছেলে-মেয়ে সন্ধ্যায় পড়তে বসতে পারছে না। এই কারণে হারিকেন কিনতে আসা।

তিনি আরও বলেন, মোমবাতির ব্যবহারে খরচ বেশি। হারিকেনে কেরোসিন দিলে খরচটা কম আসে। তবে হারিকেনের দাম বেশি।

সেলিনা আক্তার বুলু নামের আরেক হারিকেন ক্রেতা বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে আমরা এত কষ্ট ও দুর্ভোগে আছি। আমরা হারিকেন কিনতে এসেছি কারেন্ট নেই বলে। চার্জারে চার্জ দিতে পারছি না। তাই হারিকেন কিনতে এসেছি।

কথা হয় একই মার্কেটের আরেক হারিকেন বিক্রেতা সত্যপদ সাহার সঙ্গে। তিনি বলেন, হারিকেন আগে থেকে বিক্রিই নেই। এখন লোডশেডিংয়ের কারণে দু-একটা বিক্রি হচ্ছে। সবাই চার্জার লাইটগুলো ব্যবহার করছে। আমরা হারিকেন ৩শো থেকে চারশো টাকার মধ্যে বিক্রি করছি। হারিকেনের শেপ আগের মতোই আছে, পরিবর্তন নেই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে শুধু বগুড়ার এভরিবডি নামের একটি কোম্পানিই হারিকেন তৈরি করে। এটা চলে না, তাই একটা কোম্পানিই শুধু তৈরি করে।

সত্যপদ সাহার দোকানের কর্মচারী মো. লাল্টু বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে হারিকেনের চাহিদা একটু বেশি। তবে বিদ্যুৎ ভালো হয়ে গেলে, আর এই চাহিদা থাকবে না। চার্জার লাইটেই মানুষের ঝোক বেশি।

হারিকেন কিনতে আসা সেলুলার হোসেন বলেন, কারেন্টের সমস্যার কারণে হারিকেন কিনেছি। চার্জার লাইট কীভাবে জ্বালাবো, চার্জতো দেওয়া লাগবে। কারেন্ট নেই, তাই আবার তেলের হারিকেন ফিরিয়ে আনছি।

চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী আমির উদ্দীন বলেন, আমি ১৯৬২ সাল থেকে ব্যবসা করছি। তখন আমরা কুপি বাতি বিক্রি করতাম। এখন আর সেটা দেখাই যায় না। কিন্তু এই লোডশেডিংয়ের কারণে আবার দেখা যাছে। সেই পুরোনো যুগ আবার ফিরে এসেছে।

নাম প্রকাশ না করে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘সারাদিন বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুতের জন্যি হা-হুতাশ করছি। আর সন্ধ্যার পরতো ছেলে-পুলের লেখাপড়াই হচ্ছে না। ল্যাম্পো (কুপি) আর হারিকেন এখন চলছে, যা দেখা যেত না। লোডশেডিয়ের কারণে মনে হচ্ছে হারিকেন-ল্যাম্পোর আবার যৌবন ফিরেছে।’

সিনিয়র সাংবাদিক ও স্থানীয় একটি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন বলেন, সন্ধ্যাবাতি মানেই হারিকেন কিংবা ল্যাম্প জ্বালানো। আমাদের ছেলেবেলায় এটা ছিল। কিন্তু এখন আধুনিকতার সঙ্গে এসব হারিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুতের এই বিপর্যয়ে হয়তো ল্যাম্প আর হারিকেনের ব্যবহার বাড়বে, তবে সেটা সাময়িক। মানুষ এটাকে আর ওইভাবে গ্রহণ করবে না। কারণ হারিকেন ও ল্যাম্প ব্যবহারে প্রতিদিনই এটার পরিচর্যা করতে নির্দিষ্ট সময় ব্যয় করতে হবে। কিন্তু চার্জার লাইটগুলো ব্যবহারে এই সমস্যা নেই। তাছাড়া বর্তমান বাজারে একটা ল্যাম্প প্রকারভেদে ৮০ থেকে ২৫০ টাকা আর হারিকেনের দাম ২৮০ থেকে ৪০০ টাকার মতো। অথচ এর থেকেও কম দামে বেশ ভালো মানের চার্জার ও এনার্জি সেভিং চার্জার বাল্পগুলো পাওয়া যায়। তাই সব মিলিয়ে কুপি বাতি অর্থাৎ ল্যাম্প ও হারিকেন বিলুপ্ত হবেই।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।