ডোবায় পড়ে ভাইয়ের মৃত্যু, খবর শুনে ছাদ থেকে লাফ বোনের

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৯:৪১ পিএম, ১২ জুন ২০২৩

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় ডোবার পানিতে ডুবে নিরব মোল্লা (১২) এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ খবর শোনার তার বড়বোন নাজা বেগম (১৮) বাসার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

সোমবার (১২ জুন) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ভৈরব পৌর শহরের চন্ডিবের মোল্লা বাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিরব ও নাজা বেগম ওই বাড়ির বাছির মোল্লার ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিকেল ৫টার দিকে চন্ডিবের মোল্লা বাড়ির ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নিরব পাশের একটি মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে যায়। খেলার সময় ফুটবল ডোবায় পড়ে যায়। ফুটবলটি পানি থেকে আনতে গিয়ে সে ডুবে যায়। বন্ধুরা তাকে পানি থেকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্বজনদের অনুরোধে নিরবের ইসিজির জন্য পাশের একটি প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে নার্স খাদিজাকে ডেকে আনা হয়। ইসিজির পরও নিরবকে মৃত ঘোষণা করা হলে তার স্বজনরা নার্স খাদিজাকে মারধর শুরু করেন। তাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মচারীদেরও জখম করা হয়।

এদিকে ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে বোন নাজা বেগম তার বাসার দোতলা থেকে লাফ দেন। স্বজনরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। তবে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার নেয়ার পথে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের ভূলতা এলাকায় যাওয়ার পর নাজা বেগমও মারা যান। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চন্ডিবের মোল্লা বাড়ির বাসিন্দা ও রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শহীদুল্লাহ।

নিরবের চাচা নাছির মোল্লা বলেন, আমার ভাতিজা পানিতে ডুবে মারা যায়। এ খবর পেয়ে ভাতিজি দোতলার ছাদ থেকে পড়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। হাসপাতালের ঘটে যাওয়া ঘটনাটি দুঃখজনক।

নার্স খাদিজার মা রওশনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ে ইসিজি করতে ক্লিনিক থেকে হাসপাতালে যায়। ইসিজির পর মৃত্যুর খবরে নিরবের স্বজনরা অন্যায়ভাবে আমার মেয়েকে মেরে জখম করেছে। আমার মেয়ের কী দোষ ছিল। আমি এর বিচার চাই।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রওশন আরা রিপা জাগো নিউজকে বলেন, নিরব নামের শিশুটি হাসপাতালে আনার পর তাকে মৃত পাই। স্বজনদের চাপে ইসিজি করা হয়েছে। হাসপাতালে কর্মী না থাকায় বাইরের ক্লিনিক থেকে নার্স খাদিজাকে ডেকে আনা হয়। ইসিজি করার পর মৃত ঘোষণা করা হলেও নিরবের স্বজনরা আমার ওপর চড়াও হয় এবং আমাকে তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। অফিসের কর্তব্যরত উপ-সহকারী সেলিম মিয়াকে মারধর করে। এ সময় তারা আরও তিনজনকে মেরে জখম করে। অপরদিকে নিরবের বোন নাজা বেগমকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। মারা যাওয়া রোগীকে ডাক্তাররা জীবিত করে দিতে পারবেন না। শিশুর স্বজনরা ডাক্তারসহ চারজনকে মেরে আহত করেছে। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ঘটনা জানিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করছি।

রাজীবুল হাসান/এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।