মাগুরছড়া ট্র্যাজেডি: ২৬ বছরেও মেলেনি ক্ষতিপূরণ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০৫:০০ পিএম, ১৪ জুন ২০২৩

মৌলভীবাজারের মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৬ বছর হয়েছে আজ বুধবার। ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন দিনগত রাত পৌনে ২টায় মাগুরছড়া গ্যাসকূপে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা কমলগঞ্জ। আগুনের লেলিহান শিখায় লাল হয়ে ওঠে রাতের আকাশ। ভীত-সন্ত্রস্ত লোকজন ঘরের মালামাল রেখে প্রাণভয়ে ছুটেন দিগ্বিদিক। প্রায় ৫০০ ফুট উচ্চতায় লাফিয়ে ওঠা আগুনের লেলিহান শিখায় লন্ডভন্ড করে দেয় বিস্তীর্ণ বন এলাকা।

আগুনের শিখায় গ্যাসফিল্ড সংলগ্ন লাউয়াছড়া রিজার্ভ ফরেস্ট, মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি, জীববৈচিত্র্য, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, ফুলবাড়ী চা বাগান, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথ এবং কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কে ব্যাপক ক্ষতি হয়।

দেশের ইতিহাসে ভয়াবহতম অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘনগভীর বন ও এর সাহচর্যে থাকা বিপুল সংখ্যক জীববৈচিত্র্য। ক্ষতির মুখোমুখি হয় রেল ও সড়কপথ, পানজুম, বিদ্যুৎ লাইনসহ এ অঞ্চলের অসংখ্য স্থাপনা।

দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মার্কিন গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান অক্সিডেন্টাল ক্ষয়ক্ষতির আংশিক পরিশোধ করলেও কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি বন বিভাগ। ফিরে আসেনি প্রাকৃতিক বনের স্বাভাবিকতা।

পূর্ণ ক্ষতিপূরণ না দিয়েই ইউনিকলের কাছে হস্তান্তরের পর সর্বশেষ শেভরনের কাছে বিক্রি হয়েছে এ গ্যাসক্ষেত্র। শেভরন ২০০৮ সালে ওই বনে ত্রি-মাত্রিক ভূতাত্ত্বিক জরিপ কাজ সম্পন্ন করে।

২০১২ সালে শেভরন মৌলভীবাজার ১৪ নম্বর ব্লকের অধীনে নুরজাহান, ফুলবাড়ি এবং জাগছড়া চা বাগানের সবুজ বেষ্টনী কেটে কুপ খননের পর উত্তোলিত গ্যাস কালাংড়ার মাধ্যমে রশীদপুর গ্রিডে স্থানান্তর করছে। কিন্তু মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৬ বছরেও জনসম্মুখে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রকাশ হয়নি, আদায় হয়নি ক্ষতিপূরণ।

মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী জিডিসন প্রধান সুচিয়াংয়ের মতে, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক বনের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা কেউ বুঝতে পারেনি। আমরা যারা এ বনে বসবাস করছি তারা বুঝতে পারছি।

বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বনের ১৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি নিরূপণ করে দেওয়া হলেও এ পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিক বনের ক্ষতি কোনো সময়ে পুষিয়ে ওঠার নয়।

মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ আদায় জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আমিরুজ্জামান বলেন, মাগুরছড়া ব্লো-আউটের ২৬ বছর পূর্ণ হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিবেশের ক্ষতিপূরণর পাওয়া যায়নি। তাই সরকারকেই এ ব্যাপারে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে। মাগুরছড়া ব্লো-আউটে গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আমারা ১০ দফা দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি।

লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বনের ক্ষতি নিরূপণ করা হলেও এ পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিক বনের ক্ষতি কোনো সময়ে পুষিয়ে ওঠার নয়। আমার জানামতে মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণে কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়নি। বন ও পরিবেশের এই ক্ষতিপূরণ আদায় হওয়া আমাদেরও দাবি।

এনিয়ে কথা হলে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন , আমি এ জেলায় নতুন যোগদান করেছি। মাগুরছড়ায় অগ্নিকাণ্ডের ব্যাপারে আমার কাছে ক্ষতিপূরণের কোনো আবেদন জমা থাকলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার চেষ্টা করবো। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে কেউ আমার কাছে আসেনি। পরিবেশ বিপর্যয়ের ব্যাপারে আগের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

আব্দুল আজিজ/এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।