ভবনের ফটকে দোকান নির্মাণ, জিম্মি ৩০ পরিবার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ১২:০৬ পিএম, ১৮ জুন ২০২৩

লক্ষ্মীপুরে ১০ তলা ভবনের মূল ফটক ভেঙে দোকানঘর নির্মাণ করে ৩০টি পরিবারকে জিম্মি করে রাখার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

শনিবার (১৭ জুন) দুপুরে সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের দেওপাড়া এলাকার সাফওয়ান টাওয়ারে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন এ আয়োজন করেন। আবদুর রহমান আরজু নামে এক ব্যক্তির কাছে ওই পরিবারগুলো জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করা হয়। নিজেদের কেনা ফ্ল্যাটে উঠতে মই ব্যবহার করে ভবনের নিরাপত্তা দেওয়াল পাড়ি দিতে হয় ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে।

সংবাদ সম্মেলনে ফ্ল্যাট মালিক প্রবাসী দেলোয়ার হোসেন নাদিম, ইকবাল হোসেন, মো. সোহাগ, মানিক হোসেন, শিক্ষক লোকেশ্বর দাস, ব্যাংক কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, ব্যবসায়ী মো. শাহজাহান, আমেনা বেগম বক্তব্য দেন।

Lakshmipur-2.jpg

ভুক্তভোগীরা জানান, শামছুল আলম নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে সাফওয়ান টাওয়ারে ৩০টি পরিবার ফ্ল্যাট কিনেছেন। এতে নিয়ম অনুযায়ী নিচতলা পার্কিং ও চলাচলের জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা রয়েছে। কিন্তু আবদুর রহমান আরজু নামে এক ব্যক্তি ভবনের নিচতলার মূল ফটক ভেঙে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। সেখানে তিনি সিমেন্টের ব্যবসা করছেন। তার কারণেই ৩০টি পরিবার এখন জিম্মি হয়ে পড়েছে। ফ্ল্যাটে উঠতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা। মই ব্যবহার করে তাদেরকে ফ্ল্যাটে উঠতে হয়। এ জিম্মি দশা থেকে বাঁচতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে, প্রতিবাদ করলে আরজু তার লোকজন দিয়ে ফ্ল্যাট মালিক সৌদি প্রবাসী নাদিমকে মারধর করেন। এ ঘটনায় চন্দ্রগঞ্জ থানায় নাদিমের করা মামলায় আরজু কয়েকদিন জেল খেটেছেন। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হন।

ফ্ল্যাট মালিক ব্যাংক কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভবনের মূল মালিক শামছুল আলম পুরো কাজ শেষ না করেই বিদেশে পালিয়ে গেছেন। এতে আমরা কোণঠাসা হয়ে পড়ি। পরে আমরা ফ্ল্যাট মালিকরা নিজেদের টাকায় বাকি কাজ সম্পন্ন করি। এরমধ্যে আরজু মূল ফটকে লাগানো গেট খুলে ফেলে দোকানঘর নির্মাণ করে চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। নিচতলার পশ্চিম পাশও বন্ধ। এখন আমরা ৩০টি পরিবার আরজুর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। এর থেকে বাঁচতে আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ভবন মালিক পালিয়ে যাওয়ায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

অভিযুক্ত আবদুর রহমান আরজু বলেন, আমি নিচতলার একাংশ মালিকের কাছ থেকে কিনে নিয়েছি। সেই সূত্রে আমি দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করে আসছি। আমি দোকান সরাবো না। আমার দোকানের পশ্চিম পাশের অংশ হচ্ছে ফ্ল্যাট মালিকদের চলাচলের পথ। ওই অংশ উন্মুক্ত না করে সবাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার বিরুদ্ধে কথা বলছে।

Lakshmipur-2.jpg

চন্দগ্রঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, শামছুল আলম এনআরবিসি ব্যাংক চন্দ্রগঞ্জ শাখার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করেন। একদিকে শামছুল আলম পালিয়ে গেছেন। অন্যদিকে তিনি এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভবনের নিচতলার একাংশ আরজুর কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন শামছুল আলম ও ব্যাংকের কারণেই ৩০টি পরিবার সমস্যায় পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী নিচতলা পার্কিংয়ের জন্য রাখার কথা। কিন্তু নিচতলা বিক্রি করে তারা নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। এ নিয়ে ব্যাংক ম্যানেজারের সঙ্গে আমরা বসবো।

এনআরবিসি ব্যাংকের চন্দ্রগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক আবদুল কুদ্দুছ সোহাগ বলেন, বিক্রির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কে কার কাছে বিক্রি করেছে তা আমাদের জানার কথা না। এটি একমাত্র ভবনের মালিক বা উদ্যোক্তা শামছুল আলমের ব্যক্তিগত ব্যাপার।

ভবনের উদ্যোক্তা শামছুল আলম প্রবাসে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয়দের দাবি, শামছুল আলম প্রতারক। কাজ শেষ না করেই তিনি লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ভবনের নিচতলা বিক্রি করে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে কোণঠাসা করে রেখেছেন।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম বলেন, নাদিমের মামলায় আরজুকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে তিনি জামিনে বের হয়েছেন। এরপর থেকে তিনি পুলিশকে দোষারোপ করে বিভিন্ন মাধ্যমে লেখালেখি করছেন। দুই-একজনের কারণে ৩০টি পরিবার জিম্মি হয়ে রয়েছে। এ ঘটনাটি তদন্ত চলছে।

কাজল কায়েস/এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।