নেত্রকোনা-কেন্দুয়া সড়ক

৪ বছরেও শেষ হয়নি সংস্কারকাজ, ভোগান্তি চরমে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০২:০০ পিএম, ২১ জুন ২০২৩

প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলছে সংস্কার। সড়কের স্থানে স্থানে খানাখন্দ। হেলেদুলে চলছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। নেত্রকোনা-কেন্দুয়া সড়কটির সংস্কারকাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ।

কেন্দুয়ার লস্করপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের স্থানে স্থানে খানাখন্দ থাকায় হেলেদুলে চলছে যাত্রীবাহী অটোরিকশা। স্থানে স্থানে আটকে আছে মালবাহী যান। দীর্ঘদিনেও সড়কের সংস্কারকাজ শেষ না হওয়ায় প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সড়কে চলাচলকারীরা।

জানা গেছে, নেত্রকোনা-কেন্দুয়া সড়ক প্রকল্পের সংস্কারকাজ প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়িয়েও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পাঁচ বছর ধরে সড়কটিতে বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে। ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে তিন চাকার বাহন চলছে হেলেদুলে। ফলে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করা যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অথচ প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ চলাচল করেন। তাই তারা দ্রুত এ সড়কের সংস্কারকাজ শেষ করার দাবি জানান।

মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের সংস্কারকাজ বন্ধ রয়েছে। সড়কের ধারে ফেলে রাখা হয়েছে পাথর ও বালু। যানবাহন চলাচল করায় আশপাশের এলাকা ধুলায় ছেয়ে যাচ্ছে। ধুলা থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে ইজিবাইক, অটোরিকশা, রিকশা, ভ্যান, কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে থাকা যাত্রীরা নাক-মুখ ঢেকে রেখেছেন। কিছু এলাকায় পিচের ঢালাই নেই। খানাখন্দে ভরে গেছে পুরো সড়ক।

রামপুর বাজারের ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া বলেন, সড়কটির সংস্কারকাজ খুবই ঢিমেতালে চলছে। এখনো মানুষের দুর্ভোগের অবসান হচ্ছে না। পাঁচ-ছয় বছর ধরে সড়কে বাস চলে না। ইজিবাইক-অটোরিকশায় যাতায়াত করলে বেশি ভাড়া দিতে হয়।

ওই সড়কের বায়রাউড়া বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, সড়কটিতে খানাখন্দে পুকুর হয়ে গেছে। প্রতিদিন সিএনজি-রিকশা উল্টে লোকজন আহত হয়। সড়কের কারণে আমাদের বেচাকেনা হয় না। কয়েক বছর ধরে আমরা খুব বিপদে রয়েছি।

অটোরিকশাচালক আবু তাহের বলেন, বৃষ্টির সময় কাদা আর রোদের সময় ধুলাবালুতে একাকার হয়ে যায় সড়ক। মাঝেমধ্যে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া সড়কে চালাতে গেলে গাড়ির খুব ক্ষতি হয়। গাড়ি সারাতে গিয়ে আয় শেষ হয়ে যায়।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন ওই সড়ক দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ চলাচল করেন। স্কুল-কলেজে যাওয়া-আসা করে কয়েকশ শিক্ষার্থী। সড়কটি পুরোপুরি সংস্কার না হওয়ায় বাস চলাচল করে না। তিন চাকার যানবাহনে চলাচল করতে গিয়ে যাত্রীদের দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে। আবার অনেকে এ পথে না গিয়ে মদন হয়ে বেশি পথ ঘুরে নেত্রকোনা-কেন্দুয়া যাতায়াত করছেন। অথচ সড়কটি দিয়ে নেত্রকোনা-কেন্দুয়া ছাড়াও কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল করতো। এখন সে বাসগুলো অনেক পথ ঘুরে চলাচল করে।

জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফ খান বলেন, নেত্রকোনা-কেন্দুয়া সড়কে প্রায় পাঁচ বছর ধরে আন্তঃউপজেলা বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সংস্কারকাজ শেষ হলেই আবার বাস চালু করা হবে।

জেলা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা শহরের বনোয়াপাড়া মোড় থেকে কেন্দুয়া পৌর শহরের সাউদপাড়া মোড় পর্যন্ত নেত্রকোনা-কেন্দুয়া সড়কের দৈর্ঘ্য ২৬ কিলোমিটার। ২০১৯ সালে সড়কটি সংস্কারে একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটির নাম ‘নেত্রকোনা-কেন্দুয়া-আঠারোবাড়ি-ঈশ্বরগঞ্জ জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’। এর নেত্রকোনা অংশে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩৫৩ কোটি টাকা।

সূত্রটি আরও জানায়, সড়কটি ২৬ ফুট প্রশস্ত করার কথা। প্রকল্পের মেয়াদ ছিল গত ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। পরে তা ছয় মাস করে দুই বার বাড়ানো হয়। বর্ধিত সময় অনুযায়ী এ বছরের জুনে কাজের মেয়াদ শেষ হবে। তিনটি প্যাকেজ করে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে সড়ক সংস্কারের কাজ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে, এম এম বিল্ডার্স ও তানভির কনস্ট্রাকশন, মঈনউদ্দিন বাঁশি এবং ভাওয়াল কনস্ট্রাকশন। এতদিনে মাত্র ৯ কিলোমিটার অংশে পিচ ঢালাই হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দুয়ার মাইজকান্দি এলাকা থেকে লস্করপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত চার কিলোমিটার, সদরের মনাং বোর্ডবাজার থেকে মদনপুর বাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশ রয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভাওয়াল কনস্ট্রাকশনের মালিক ফকরুদ্দিন বলেন, জুনের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। পাথর সহজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এছাড়া নির্মাণসামগ্রীর দামও বেশি। তাই কাজটি শেষ করতে দেরি হয়েছে। আর মঈনউদ্দিন বাঁশির ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম ও তানভির কনস্ট্রাকশনের মালিক তানভির আহমেদ ফোন ধরেননি।

নেত্রকোনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরীফ খান বলেন, সড়কের কাজ শেষ করতে একাধিকবার ঠিকাদারকে সতর্কীকরণ চিঠি দেওয়া হয়েছে। সড়কটির প্রায় ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। জুনের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত কাজ করতে না পারলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এইচ এম কামাল/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।