‘গতমাসে নদী তাড়াইছে, এলা হামাক বানে তাড়ায়’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৫:০৯ পিএম, ২৩ জুন ২০২৩

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুসার চরের দম্পতি আব্দুল গফুর-শহরভান বেগম। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার।কিছুদিন হলো ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। সংসারে পুত্রবধূ আনলেও পানিবন্দি থাকার কষ্টে তাকে ও মেয়েকে পুত্রবধূর বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। পানি না কমা পর্যন্ত তাদের কষ্টের শেষ নেই।

সরেজমিন দেখা গেলো, শোবার ঘরে পানি ওঠায় গরু রাখার উঁচু জায়গায় টিনের বেড়া দিয়ে সেখানে রাত্রিযাপন করছেন আব্দুল গফুর-শহরভান বেগম।

jagonews24

এমন চিত্র শুধু গফুর-শহরভান দম্পতির একার না, এখানকার প্রায় ৩০টি পরিবারের একই অবস্থা। ঘরবাড়ি ছেড়ে কেউ আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধে। কেউবা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলে গেছেন আত্মীয়ের বাসায়। কেউবা বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে থাকছেন নৌকায়।

শহরভান বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘কপালে হামার শনি নাগছে (আমার কপাল খারাপ যাচ্ছে)। একুল-ওকুল করি সাঁতরে কোনোরকম বাঁচি আছি। গতমাসে নদী তাড়াইছে (নদীভাঙনের শিকার), এলা (এখন) হামাক বানে (বন্যায়) তাড়ায়। ঘর-বাড়িত পানি উঠিয়া হামার কষ্ট আরও বাড়ছে। চলাফেরা, রান্না করে খাওয়ার কষ্টে বউ-বেডি মাইনসের বাড়িত (অন্যের বাড়িতে) থুইয়া (রেখে) আসছি। সাতদিন থাকি পানিত, কাইয়্য (কেউ) খোঁজখবর নেয় না। পানিত চলাফেরা করি হাতে পায়ে ঘাও হইছে।’

Kuri-(2).jpg

আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ৬০ গ্রাম প্লাবিত, ৩০ পয়েন্টে ভাঙন

ওই গ্রামের আলহাজ মিয়া বলেন, ‘ঘরে খাট পর্যন্ত পানি। কাঁথা-বালিশ নিয়ে নৌকায় কাপড় টাঙিয়ে রাতে ঘুমাই। বৃষ্টি এলে ভিজে যাই। বন্যায় আমাগোর খুবই কষ্ট। বড়রা কষ্ট করতে পারলেও ছোট বাচ্চাগোরে নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়।’

বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়ন প্রায় দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি। বিশেষ করে মশালের চর, ফকিরের তকেয়া, চর মোল্লা হাট, বতুয়াতুলি, মুসার চরের মানুষজন খুবই কষ্টে দিন পার করছেন। এখন পর্যন্ত এ গ্রামে সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ দেওয়া হয়নি। তবে গতকাল থেকে হতদরিদ্র ও দুস্থদের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হচ্ছে।’

jagonews24

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে জেলার ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। জেলার ৩০টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ২৬টি পয়েন্টে জিও ব্যাগ, জিও টিউব ফেলে ভাঙনরোধে কাজ চলছে। বন্যা পুর্বাভাসে এ সপ্তাহে বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা নেই বলে জানা গেছে।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, নগদ অর্থ ও শুকনা খাবার মজুত রয়েছে। যেখানে যখন প্রয়োজন পড়বে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ফজলুল করিম ফারাজী/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।