গাইবান্ধা

পশুহাটে অতিরিক্ত হাসিল, বাদ পড়ছেন না বিক্রেতারাও

শামীম সরকার শাহীন
শামীম সরকার শাহীন শামীম সরকার শাহীন গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ০৫:৫০ পিএম, ২৫ জুন ২০২৩

দেশের উত্তরের জনপদ গাইবান্ধায় তথ্য গোপন করে পশুহাটগুলোতে অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। কেবলমাত্র ক্রেতার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও বাদ যাচ্ছেন না বিক্রেতারা। তাদের কাছ থেকেও নেওয়া হচ্ছে হাসিল। হাসিল আদায়ের রশিদ ক্রেতাদের দেওয়া হলেও ফাঁকা রাখা হচ্ছে ফিসের ঘর। হাটের কোথাও সাঁটানো নেই হাসিলের মূল্য তালিকা। এ পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার সাত উপজেলায় ২৩টি স্থায়ী ও ২২টি অস্থায়ী পশুর হাট আছে। জেলার উল্লেখযোগ্য হাটগুলো হলো- দাড়িয়াপুর, লক্ষ্মীপুর, মীরগঞ্জ, ভরতখালি, সাদুল্লাপুর, ধাপেরহাট, নগর কাঠগড়া, বেলকা, শোভাগঞ্জ, মাঠেরহাট। এসব হাটে কোথাও হাসিল আদায়ের তালিকা দেখা যায়নি। অন্ধকারে রেখেছেন ক্রেতা-বিক্রেতাদের। তাদের উভয়ের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন অতিরিক্ত টাকা। মনগড়া টাকা আদায় করতে গিয়ে হরহামেশা বাগবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে ইজারাদারদের লোকজন।

ব্যাপারী ও ক্রেতারা জানান, ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের পাশাপাশি বিক্রেতাদের কাছেও নেওয়া হচ্ছে টাকা। অথচ বিক্রেতাদের কাছে টোল নেওয়া নিষিদ্ধ করেছে জেলা প্রশাসন।

সদর উপজেলার দাড়িয়াপুর হাটে গরু কিনতে আসা আজিজুল হক বলেন, একটি গরু কিনতে ইজারাদারকে ৯০০ টাকা দিতে হচ্ছে। আমি ৬০০ টাকা দিয়েছি আর যার কাছ থেকে গরু কিনেছি তিনি ৩০০ টাকা দিয়েছে।

সুন্দরগঞ্জ পৌরশহরের মীরগঞ্জ হাটে কথা হয় ক্রেতা আবদুল মাজেদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, হাট থেকে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি বকনা কিনেছি। ইজারাদারের লোক ৯০০ টাকার কম মানেন না। পরে অনুরোধ করে ৮৫০ টাকা দিয়ে মানিয়েছি। আমি দিয়েছি ৬৫০ টাকা আর গরু বিক্রেতা দিয়েছে ২০০ টাকা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বেলকা হাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনে বাড়ি ফিরছিলেন তাজুল ইসলাম। তিনি কঞ্চিবাড়ী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কেনেন তিনি। তার কাছ থেকে ৫০০ টাকা আর বিক্রেতার কাছ থেকে ১০০ টাকা হাসিল নিয়েছে ইজারাদারের লোক।

ওই ইউপি সদস্য বলেন, হাটে খাজনা আদায়ের তালিকা টানানো না থাকায় কম নিচ্ছেন না বেশি নিচ্ছেন সেটা বোঝার উপায় নেই।

jagonews24

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পশু হাটের কয়েকজন দালাল (ব্যবসায়ী) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমন কোনো হাট নেই যে আমরা গরু বেচা-কেনা করি না। কিন্তু কখনো তাদের ৪০০ টাকা নিতে দেখিনি। বছরজুড়েই তারা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে এভাবেই অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকেন। কেউ কম দিতে চাইলে পেশিশক্তি দেখিয়ে টাকা আদায় করেন ইজারাদারের লোকজন।

হাসিল বইয়ে টাকার ঘর খালি রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বেলকা পশুর হাটে চালান লেখক নিরঞ্জন জাগো নিউজকে বলেন, এখানে সে ধরনের কোনো ঘর না থাকায় লেখা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু আমাদের রশিদে ওই ঘর নাই এমনটা না, সব হাটেই একই অবস্থা।

বেলকা হাটে থাকা ইজারাদারের প্রতিনিধি ওয়াহেদুজ্জামান মন্টু জাগো নিউজকে বলেন, হাটে হাসিল মূল্যের তালিকা টানানোর দায়িত্ব আমাদের নয়, এ দায়িত্ব প্রশাসনের।

দারিয়াপুর হাট ইজারদার আয়ান উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, বহুদিন ধরে ক্রেতাদের কাছে ৬০০ টাকা ও বিক্রেতাদের কাছে ৩০০ টাকা হাসিল নেওয়া হচ্ছে। আমরা অনেকের কাছে কমও নিচ্ছি। বিক্রেতাদের কাছে নেওয়ার কথা নয়। কিন্তু সরকার ১৬ বছর আগে এ হাসিল নির্ধারণ করে। আমরা হাসিল দর পরিবর্তনের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ-আলম জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি বিধি প্রতিপালনে উপজেলার সব পশুহাটের মালিকদের নিয়ে সভা হয়েছে। অতিরিক্ত হাসিল আদায় বন্ধ ও হাসিল আদায় সম্বলিত মূল্য তালিকা হাটের দৃশ্যমান জায়গায় সাঁটানোসহ পশুহাটের সবধরনের নিয়ম বাস্তবায়নে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হাট মালিকরা সেগুলো বাস্তবায়ন করছে কি-না সে বিষয়েও তদারকি করা হবে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শরীফুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, গবাদিপশুসহ ১২৫ প্রকার দ্রব্যাদি বেচাকেনার জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রতিটি গরু ও মহিষ সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা, প্রতিটি ছাগল ও ভেড়া ১৫০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়। গবাদিপশুর ক্ষেত্রে কেবল ক্রেতারা হাসিল দেবেন, বিক্রেতা নন।

তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত হাসিল আদায় করায় দাড়িয়াপুর হাটের ইজারাদার আয়ান উদ্দিনকে শোকজ করা হয়েছে।

এবিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. অলিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কোনো পশুহাটে অতিরিক্ত ও অবৈধভাবে হাসিল আদায় করা না হয়, এজন্য সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা নিতে ইউএনওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।