মির্জাপুরে নদীভাঙন

চোখের সামনে সব নিয়ে গেলো সর্বনাশা নদী

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)
প্রকাশিত: ০৪:০৫ পিএম, ০৪ জুলাই ২০২৩

‘সর্বনাশা ভাঙনে চোখের সামনে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে দোকানঘর, বাড়ি ও রাস্তা ঝিনাই নদীতে বিলীন হয়ে গেলো।’ কথাগুলো বলে বিলাপ করছিলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী গবিন্দ পাল। শুধু গবিন্দ পালের দোকান নয়, ঝিনাই নদীর ভাঙনে আরও ২০টি দোকানঘরসহ ফতেপুর বাজারের এক তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকার পালপাড়ার কমপক্ষে ১৮টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

এদিকে ফতেপুরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক ফতেপুর-কুরণী পাকা সড়কটির কমপক্ষে ১০০০ ফুট নদীগর্ভে চলে গেছে। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফতেপুর। ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফতেপুর ইউপি কার্যালয়, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, দোতলা সরকারি রয়েল মার্কেট বাজার, ফতেপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মানবেতর জীবনযাপন করছেন দোকানপাট ও গৃহহারা পরিবারগুলো।

এলাকাবাসী জানায়, গত ২০ জুন ওই এলাকায় ঝিনাই নদীর ভাঙন শুরু হয়। এর তিনদিন পর ফতেপুরের শতাব্দী প্রাচীন বাজারের পূর্ব অংশে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। এই ভাঙনে বাজারের অন্তত ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ১৮টি বাড়ির অর্ধশত ঘর ও ফতেপুর-কুরণী পাকা সড়কের কমপক্ষে ১০০০ ফুট নদীগর্ভে চলে যায়। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে ফতেপুর বাজারের দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যালয় ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান।

jagonews24

ঝিনাই নদীর এই ভাঙনে কুরণী-ফতেপুর পাকা সড়কের এক টাকার (হিলড়া) বাজার এলাকার বেশ কিছু অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। ফলে উপজেলা সদরের সঙ্গে এলাকার উত্তরাংশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নদীগর্ভে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে নিঃস্ব মানুষগুলো এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাননি।

বানকাটা গ্রামের ওমর শরীফ জানান, ইউপি চেয়ারম্যান ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে বানকাটা ও ফতেপুর পালপাড়া গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকা রাস্তাও ভেঙে নদীতে চলে গেছে।

পালপাড়া সংলগ্ন সৌদি আরব প্রবাসী শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রবাসী জীবনের অর্জিত সমস্ত অর্থ দিয়ে বাড়িটি করেছি। মুহূর্তের মধ্যে ঝিনাই নদীতে চলে গেছে। এই বয়সে আর অর্থ উপার্জন করে বাড়ি করা সম্ভব নয়।

নদীভাঙনে গৃহহারা পালপাড়ার জিতেন পাল বলেন, ছোট একটি ছাপড়া ছাড়া বাড়ির পুরো অংশই ঝিনাই নদীতে চলে গেছে। এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কোনো সহায়তা দেননি।

jagonews24

পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা ওই ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তারা বাজারের পূর্বপাশের ৫০ মিটার এলাকায় ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করেছেন বলে জানা গেছে। এরমধ্যে সোমবার (৩ জুলাই) পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পুরো ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফকে ক্ষতিস্তদের তালিকা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া টাঙ্গাইল-৭ মির্জাপুর আসনের সংসদ সদস্য সদস্য খান আহমেদ শুভ ফতেপুরের ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহযোগিতা এবং ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়েজনীয় ববস্থার আশ্বাস দেন।

এস এম এরশাদ/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।