মাদক কারবার নিয়ে যুবলীগকর্মী-চেয়ারম্যানের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মকলেছুর রহমান শিলনের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীকে দিয়ে মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনও হয়েছে।
অভিযোগকারী ওই যুবলীগ কর্মীর নাম কামাল হোসেন। তিনি আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের গড়চাপড়া গ্রামের আবদুল হান্নানের ছেলে। আলমডাঙ্গা সাংবাদিক ইউনিটি কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার রাতে এ সংবাদ সম্মেলন করে ওই যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন তিনি।
অপরদিকে রোববার বিকেলে জেহালা ইউনিয়নের মুন্সিগঞ্জ বাজারের মদনবাবুর মোড়ে ইউপি চেয়ারম্যান শিলনের কর্মী-সমর্থকরা ঘণ্টাব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেন।
বৃহস্পতিবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে যুবলীগকর্মী কামাল বলেন, ২০২১ সালে জেহালা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যুবলীগ নেতা মকলেছুর রহমান শিলন চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে চেয়ারম্যান মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন।
নিজেকে কৃষক দাবি করে কামাল বলেন, বংশপরম্পরায় আমি কৃষিকাজ করে সংসার চালিয়ে আসছিলাম। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে চেয়ারম্যান তার সঙ্গে চলাচল করতে বলেন।
কামালের দাবি, গত বছরের শুরুর দিকে ইউপি চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান জোরপূর্বক আমাকে (কামাল) মাদক কারবারে যুক্ত করেন। আমাকে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মাদক পাঠানো হয়। মাদক কারবারে জড়িত থাকার অপরাধে আমার বিরুদ্ধে আলমডাঙ্গা থানায় মামলাও হয়। একপর্যায়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আমাকে কারাগারে পাঠান। কারাগার থেকে ফিরলে চেয়ারম্যান কৌশলে আবারও মাদক কারবারে জড়িয়ে ফেলেন। চেয়ারম্যান আমাকে নিশ্চয়তা দিয়ে মাদক কারবার করলে আর কোনো মামলা হবে না, র্যাব-পুলিশও কিছু বলবে না।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনের পর রোববার (৯ জুলাই) জেহালা ইউনিয়নের মুন্সিগঞ্জ বাজারের মদনবাবুর মোড়ে ইউপি চেয়ারম্যান শিলনের কর্মী-সমর্থকদের ঘণ্টাব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন হয়।
এসময় বক্তারা বলেন, জেহালা ইউনিয়নজুড়ে যখন মাদকের অভায়রণ্য গড়ে তুলে কামাল, আর তার অত্যাচারে ইউনিয়নবাসীও অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে তখনই পুলিশের সহযোগিতায় মাদকের বিরুদ্ধে ইউপি চেয়ারম্যান শিলন দুর্গগড়ে তোলেন। এরই মধ্যে মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশ অনেক মাদক কারবারি ও সেবীকে গ্রেফতার করেছে। মাদক বিক্রেতা কামালকে পুলিশ খুঁজলে তিনি চেয়ারম্যান শিলনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলেন।
প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বকুল হোসেন, ইউপি সদস্য জসি, আনারুল ইসলাম, হীরালাল, রিপন, রুবেল, বাবু, হাসেম, পিনজিরা, আরিফা খাতুন, লাভলি খাতুন, সমীর, আব্দুল কাদের, সাইদুর সোনা মিয়া, রকিবুল ইসলাম, আমির, জনি, রেন্টু, নজরুল, মিলন আহমেদ, নাসির উদ্দিন, সিলন, সাহেদ, মুঞ্জু, রানা, আলি হোসেন, সিদ্দিক, মিনহাজ, নান্নু, মহিবুর, শুভ।
এর আগে এ ঘটনায় ওই যুবলীগ কর্মীর সংবাদ সম্মেলনের পরে গত শুক্রবার (৭ জুলাই) পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন জেহালা ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান শিলন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান শিলন উল্লেখ করেছেন, গত আড়াই মাস ধরে আমি মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। ফলে অনেক মাদক কারবারি পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। যে কারণে গড়চাপড়া গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি ও একাধিক মামলার আসামি কামাল আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে ও নিজে বাঁচার জন্য মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, কামালকে আমি কখনোই হুমকি দেইনি। কামাল দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবার করে আসছে। তার নামে মাদক ও হত্যাসহ একাধিক মামলা আছে। যে কারণে তাকে আটকের জন্য পুলিশ খুঁজতেই পারে।
আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জাগো নিউজকে বলেন, সংবাদ সম্মেলন করা কামাল হোসেন নামে ওই ব্যক্তি যুবলীগকর্মী কি না জানি না। তবে তিনি মাদক কারবারি। বেশ কয়েকটি মাদক সংক্রান্ত মামলা তার নামে আছে। পুলিশের হাতে এর আগেও তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। জামিনে বের হয়ে আবার মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আর জেহালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বিষয়ে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। এরপরও বিষয়টির খোঁজ নেবো।
হুসাইন মালিক/এসজে/এমএস