আত্রাই রাবার ড্যাম

সংস্কারের পর সুফল পাচ্ছেন উপকারভোগীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নওগাঁ
প্রকাশিত: ০৫:৪৯ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২৩

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার শুকটিগাছা এলাকায় আত্রাই নদীতে নির্মিত রাবার ড্যামটি সংস্কার করা হয়েছে। এতে নদীর ওপর নির্ভরশীল কৃষক ও মৎস্যজীবীরা ফের সুফল পেতে শুরু করেছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে জুলাই মাসে রাবার ড্যামটি সংস্কার করা হয়। এর আগে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিষয়টি নিয়ে জাগো নিউজসহ বেশকিছু গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। পরে তা কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।

আরও পড়ুন: কাজে আসছে না ১৯ কোটি টাকার রাবার ড্যাম

জানা গেছে, ২০১২ সালে শুকটিগাছা এলাকায় আত্রাই নদীর ওপর রাবার ড্যামটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এরপর বেশ কয়েকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হয়ে শেষে ২০১৭ সালে রাবার ড্যামটি স্থানীয় একটি পরিচালনা কমিটিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছিল ড্যামটি।

jagonews24

ড্যামটি নির্মাণের পর তিন বছর সুবিধা পেয়েছিলেন উপকারভোগীরা। এরপর নানা স্থানে ফুটো হয়ে অকেজো হয়ে পড়ে থাকায় প্রকল্পটির সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছিলেন তারা। এতে খরচ বাড়ার পাশাপাশি দুশ্চিন্তা বেড়েছিল চাষি ও মৎস্যজীবীদের। অবশেষে রাবার ড্যামটি সংস্কার করা হলে নদীতে পানি জমতে শুরু করেছে। আবারও সুবিধা পেতে শুরু করেছেন নদীর দুইপাড়ের কৃষক ও মৎস্যজীবীরা। নদীর পানি দিয়ে তারা আউশ ধানের চাষাবাদ শুরু করেছেন। এছাড়া মৎস্যজীবীরা আগের চেয়ে বেশি মাছ পাচ্ছেন।

কৃষকরা জানান, নদীর পানিতে বোরো আবাদে বিঘাপ্রতি খরচ হয় ১২০০-১৪০০ টাকা। আর গভীর নলকূপের পানি নিলে তাতে খরচ পড়ে ২৫০০-২৮০০ টাকা। এছাড়া নলকূপের পানিতে আউশ আবাদে বিঘাপ্রতি খরচ পড়ে প্রায় এক হাজার টাকা।

আরও পড়ুন: জটিলতায় ধুঁকছে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প

শুকটিগাছা গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন, রাবার ড্যামটি শুধু আমাদের জন্য না, কয়েকটি উপজেলার কৃষকদের জন্যই সুবিধা বয়ে আনে। ড্যামে পানি ভর্তি করা হলে নদীর উজানে পানি জমা হয়। পরে নদীর দুইপাড়ের কৃষকদের জন্য বিভিন্ন ফসল ফলাতে এ পানি ব্যবহার করা যায়।

jagonews24

রানীনগর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের সেচ পাম্প মালিক নওফেল হোসেন বলেন, রাবার ড্যাম নষ্ট থাকায় চৈত্র মাস আসার আগেই নদী শুকিয়ে যেত। বিকল্প হিসেবে গভীর নলকূপ দিয়ে সেচ দিলে খরচ বেশি পড়তো। রাবার ড্যাম ঠিক করার পর এখন নদীতে পানি জমা থাকছে। এই পানি দিয়ে আউশের আবাদ শুরু করা হয়েছে। নদীর পানি দিয়ে আবাদ করলে খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি ফসল উৎপাদন বেশি হয়। গভীর নলকূপ দিয়ে পানি তোলা হলে খরচ বেশি পড়ে। এছাড়া পানিতে লবণাক্ততা থাকায় ফলনও কম হয়।

কুনুজ গ্রামের কৃষক আজাহার আলী বলেন, সারাবছরই নদীর পানি দিয়ে বোরো ও আউশের পাশাপাশি বিভিন্ন রবিশস্যের চাষাবাদ করা হয়। নদীর পানিতে বোরো আবাদে বিঘাপ্রতি খরচ হয় ১৩০০ টাকা। আর গভীর নলকূপে খরচ পড়ে ২৫০০-২৮০০ টাকা। এছাড়া আউশ আবাদে বিঘাপ্রতি খরচ পড়ে প্রায় এক হাজার টাকা।

রাবার ড্যাম সংস্কারক (হেড মিস্ত্রী) শাহ আলম বলেন, রাবার ড্যামটি বেশকিছু জায়গায় ঘর্ষণের ফলে ছিদ্র হয়ে যায়। সেগুলো সংস্কার করা হয়েছে। আশা করা যায়, ওই স্থানে আগামী ১০-১২ বছর আর কিছু হবে না। রাবার ড্যামটি সংস্কারের পর পানি ভরে কয়েকদিন পরীক্ষা করা হয়েছে। আপাতত কোনো সমস্যা নেই।

jagonews24

আরও পড়ুন: একটি রাবারড্যাম, ভাগ্য বদলেছে হাজারো চাষির

শুকটিগাছা রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি শহিদুল ইসলাম, রাবার ড্যামটি তিন বছর অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকার বিষয়টি এলজিইডিতে কয়েকবার জানানো হয়েছিল। অবশেষে তা সংস্কার করা হয়েছে। এতে নদীর দুইপাড়ের কৃষকসহ মৎস্যজীবীরা সুফল পেতে শুরু করেছেন। এ সমিতির সদস্য (উপকারভোগী) সংখ্যা ১৪৫ জন। এর মধ্যে ৮০ জন কৃষক। বাকিরা মৎস্যজীবী।

নওগাঁ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর রাবার ড্যামটি সংস্কার করাসহ দেওয়ালে মোজাইক করা হয়েছে। ড্যামে পানি দিয়ে বেশ কিছুদিন পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে কোনো সমস্যা আছে কি না। ড্যামটি সংস্কার হওয়ার পর আবারও সুবিধা পেতে শুরু করেছেন উপকারভোগীরা।

আব্বাস আলী/এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।