সিজারের পর রোগীর মৃত্যু
চিকিৎসকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ ফাতেমা বেগম নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে দুই চিকিৎসকসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অভিযুক্ত চিকিৎসকরা হলেন নাজমুল হক ও গুনময় পোদ্দার।
রোববার (৩০ জুলাই) বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল রামগঞ্জ আদালতের বিচারক আনোয়ার হোসেন এ নির্দেশ দেন। নিহত ফাতেমার স্বামী মনর আলী আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন।
সন্ধ্যায় বাদীর আইনজীবী মো. রেহান ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অচেতন (অ্যানেস্থেসিয়া) না করেই ভিকটিমের অস্ত্রোপচার (সিজার) করা হয়। এতে ভিকটিম মারা যায়। এ ঘটনায় বাদী আদালতে অভিযোগ করেন। ঘটনাটি আমলে নিয়ে বিচারক রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর পর চলে গেলেন আঁখিও
সন্ধ্যায় আদালতের পেশকার মোরশেদ আলম বলেন, দুই চিকিৎসকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নির্দেশনা কপি আগামীকাল রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বরাবর পাঠানো হবে।
অভিযুক্ত ডা. নাজমুল হক রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট ও গুনময় পোদ্দার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। এছাড়া নাজমুল রামগঞ্জের ‘নিউ উপশম জেনারেল হাসপাতালে’র মেডিকেল অফিসার ও গাইনি বিশেষজ্ঞ এবং গুনময় উপশম হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ এবং মেডিকেল অফিসার হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন বলে জানা গেছে।

অভিযুক্ত অন্যরা হলেন উপশম হাসপাতালের চেয়ারম্যান মায়া বেগম ও ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) জসিম উদ্দিন। আর বাদী মনর আলী রামগঞ্জ উপজেলার লামচর ইউনিয়নের দক্ষিণ হাজিপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে।
আরও পড়ুন: নতুন আইনে জেল-জরিমানা থাকায় ভুল চিকিৎসা কমবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
এজাহার সূত্র জানায়, গত ৪ জুলাই মনর আলীর স্ত্রীর ফাতেমার প্রসব ব্যথা উঠে। এতে তাকে রামগঞ্জে ‘উপশম হাসপাতালে’ নেওয়া হয়। সেখানে হাসপাতালের ব্যবস্থাপক জসিম জানান ফাতেমাকে দ্রুত সিজার করাতে হবে। গাইনি বিশেষজ্ঞ নাজমুলের অধীনে তার সিজার হবে। ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ডা. নাজমুল ও গুনময়ও অপারেশন কক্ষে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর ফাতেমা প্রচণ্ড জোরে চিৎকার করে উঠেন। পরে নাজমুল অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে জানায় প্রসূতি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। একপর্যায়ে তাকে (ফাতেমা) অপারেশন কক্ষ থেকে বের করা হয়।
এসময় ফাতেমা স্বজনদের জানান, ডা. নাজমুল ও গুনময় তার কলিজা ছিঁড়ে ফেলেছে, পেটে প্রচণ্ড যন্ত্রণা। তাকে অচেতন (অ্যানেস্থেসিয়া) না করেই পেটে চুরি চালানো হয়েছে। এতে চিৎকার দিলে ডা. গুনময় তার মুখ ও হাসপাতালের নার্সসহ কর্মচারীরা হাত-পা চেপে ধরেন। পরে ডা. নাজমুলের নির্দেশনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফাতেমাকে কুমিল্লা মেডিকেলে রেফার করে। সেখানে নেওয়ার পথেই মারা যান ফাতেমা।
আরও পড়ুন: বাবাকে দেশে ভুল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে
মনর আলী বলেন, আমার স্ত্রীকে অচেতন না করেই সিজার করা হয়েছে। তার পেটের বাম পাশে অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ছিল। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারণেই আমার স্ত্রী মারা গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এর সঙ্গে জড়িত। আমি তাদের বিচার চাই।
ডা. গুণময় পোদ্দার বলেন, অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়া কোনো রোগীর অপারেশন করা সম্ভব নয়। ওই রোগীকে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়েছে। পরে তার চেতনা ফিরলে আমি অপারেশন কক্ষ থেকে বের হয়ে আসি। প্রসূতির মৃত্যুর বিষটি কেউ আমাকে জানায়নি। কি কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তাও সঠিকভাবে বলতে পারছি না।
ডা. নাজমুল হক বলেন, সিজারের পর রোগী স্ট্রোক করেছে। এজন্য তাকে দ্রুত কুমিল্লা মেডিকেলে রেফার করা হয়। সকল নিয়ম মেনেই রোগীর সিজার করা হয়েছে। আমাদের কোনো ত্রুটি ছিল না।
সম্প্রতি রামগঞ্জের আল ফারুক হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ডা. গুনময় পোদ্দার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটি ডা. নাজমুল হককে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু অন্য আরেকটি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
কাজল কায়েস/জেডএইচ/