কাঙ্ক্ষিত সেবা নেই, না বলেই হাসপাতাল ছাড়ছেন ডেঙ্গুরোগীরা
সিরাজগঞ্জে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাইরে থেকে রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা করতে গিয়ে তাতে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন আসছে। যে কারণে প্রতিদিন বিপাকে পড়ছেন রোগীরা। অনেকেই আবার সঠিক চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ভর্তি হওয়ার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাউকে না জানিয়েই বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে জেলার নয় উপজেলায় ২৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। জেলায় এখন পর্যন্ত মোট ২১২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। যার ১৩৮ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরা এখনো হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বিকেলে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের ডেঙ্গু কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল রেজিস্টারে ভর্তি রোগী ১২ জন থাকলেও বেডগুলোতে মাত্র ছয়জন ডেঙ্গুরোগী রয়েছেন।
চৌহালী উপজেলার ঘোড়জান ইউনিয়নের চরধীতপুর গ্রাম থেকে এসেছেন আবুল হোসেনের ছেলে লুৎফর রহমান (৪৩)। তিনি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, দুদিন হলো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। সব পরীক্ষা বাইরে গিয়ে করতে হয়। এরা শুধু প্যারাসিটামল ও গ্যাসের ট্যাবলেট দেয়।
শাহজাদপুর উপজেলার পোরজোনা ইউনিয়নের আব্দুল মান্নান সেখের ছেলে ডেঙ্গুরোগী চাঁদ আলী (২০) বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে প্রতিদিন রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষা করতে হয়। অথচ এই হাসপাতালে এমন পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থাই নেই। বাইরের প্যাথলজিতে পরীক্ষা করতে প্রতিবার ৪০০-৫০০ টাকা করে নেয়। এরপরেও সঠিক রিপোর্টটি পাওয়া যায় না। একেক জায়গায় একেক রিপোর্ট আসে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চক শিয়ালকোল গ্রামের দুলাল প্রামাণিকের ছেলে ডেঙ্গুরোগী মোহাম্মদ শান্ত (২২) বলেন, হাসপাতালটিতে মানসম্মত কোনো সেবা না থাকায় এরইমধ্যে অনেক ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েও না বলে চলে গেছেন। আজ আমরাও চলে যাবো।
জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলা এসব রোগীই ঢাকায় বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ছুটিতে বাড়ি এসে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন তারা।
হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ সেবিকা খাদিজা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালে অনেক ডেঙ্গুরোগী ভর্তি ছিলেন। তবে এরইমধ্যে কয়েকজন রোগী আমাদের না বলেই চলে গেছেন।
সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রতন কুমার রায় জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালে ৫০ টাকার বিনিময়ে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষার জন্য যে রিএজেন্ট প্রয়োজন হয় সেটির সরবরাহ না থাকায় বর্তমানে বাইরের প্যাথলজি থেকে এই পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।
হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফরিদুল ইসলাম বলেন, বেশ কদিন ধরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যে কারণে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য হাসপাতালে আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ডেপুটি সিভিল সার্জন আ.ফ.ম. ওবায়দুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে হাসপাতালে রক্তের প্লাটিলেট পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই সেটি আমি অবগত নই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এফএ/এমএস