নওগাঁয় দুই মাদরাসা শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু, একজন চিকিৎসাধীন
নওগাঁর নিয়ামতপুরে দুই মাদরাসা শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরেক শিক্ষার্থী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। তাদেরকে সাপে কামড় দিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবার (৩১ জুলাই) দিনগত রাত ২টার দিকে উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের পুস্তইল সাহাপুর রিয়াজুল জান্নাহ মহিলা হাফেজিয়া মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের পানিহারা গ্রামের নাজিম বাবুর মেয়ে সাদিয়া খাতুন (৯) ও পাশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার পূর্ব ব্রাহ্মণ গ্রামের আবু সায়েমের মেয়ে আসমা আক্তার সুইটি (১৩)। চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীর নাম মোবাশ্বিরা খাতুন (১১)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিন বছর আগে ওই মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। মাদরাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ জন। এলাকাবাসীর আর্থিক সহযোগিতায় মাদরাসা পরিচালনা করা হয়। গত বছরও মাদরাসার দুই শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এলাকাবাসীর ধারণা, মাদরাসায় ‘জিনের আসর’ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাথাব্যথা, শরীর ঝিমঝিম করা, রাতে শিক্ষার্থীরা ঘুমিয়ে গেলে স্বপ্নে তাদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনাও হয়েছে। এ কারণে কবিরাজ দিয়ে ঝাড়ফুঁক করে নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থী মোবাশ্বিরা খাতুনের বাবা মোকলেছুর রহমান বলেন, মাদরাসায় খারাপ জিনের আসর রয়েছে। বাচ্চাদের বিভিন্ন সময় স্বপ্নে দেখাতো এই মাদরাসা ছেড়ে চলে যেতে। তা না হলে বাচ্চাদের মেরে ফেলা হবে। আবার অনেক সময় রাতে মাদরাসার বাইরে থেকে ডাকাডাকি করা হয়। কিন্তু বের হওয়ার পর আর কাউকে দেখতে পাওয়া যায় না। মেয়ে সুস্থ হলে আর ওই মাদরাসায় পাঠাবো না।
ওই এলাকার কবিরাজ একরামুল হক বলেন, আমি প্রায় ৩০ বছর কবিরাজি পেশায় আছি। মাদরাসার জায়গাটা অনেক খারাপ। জিনের বসবাস রয়েছে এখানে। বাচ্চাদের সবসময় ভয়ের মধ্যে রাখতো তারা।
মাদরাসার শিক্ষিকা জুলাইখা বলেন, মাদরাসা করার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের মাথাব্যথা, শরীর ঝিমঝিম করা, রাতে ঘুমের মধ্যে মেরে ফেলার স্বপ্ন দেখানোর ঘটনা ঘটে। পরে মাদরাসা কমিটির মাধ্যমে কবিরাজ দিয়ে ঝাড়ফুঁক করে নেওয়া হয়েছে। তবে আমার সঙ্গে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে শিক্ষার্থীদের চিৎকারে ঘুম থেকে জেগে উঠি। এক শিক্ষার্থী সাপ কামড় দিয়েছে বলে চিৎকার করে। পরে আরও দুই শিক্ষার্থী কামড় দিয়েছে বলে চিৎকার করে। এক পর্যায়ে মাদরাসা কমিটির মাধ্যমে অভিভাবকদের জানানো হয়। তবে তাদের মৃত্যু আমি মেনে নিতে পারছি না।
ওই ইউনিয়নের স্থানীয় মেম্বার বসির আহমেদ বলেন, শুনেছি অনেক আগে মাদরাসার ওই জায়গায় মন্দির ছিল। এরপর দীর্ঘদিন জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল। পরে গ্রামবাসী সেখানে মাদরাসা তৈরি করে নিজেদের সহযোগিতায় পরিচালনা করে আসছিল। গতবছর দুই শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর মাদরাসায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দিনে মাদরাসায় পাঠদান করা হলেও অন্য জায়গায় বাচ্চারা রাত্রিযাপন করতো। এভাবে চার-পাঁচ মাস কোনো সমস্যা না হওয়ায় আবারও বাচ্চারা মাদরাসায় রাত্রিযাপন শুরু করে। যেখানে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে সেখানে প্রতিষ্ঠান না থাকাই ভালো।
স্থানীয় রসুলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোতালেব হোসেন বাবু বলেন, গত বছরও ওই মাদরাসায় দুই শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছিল। এবছর আবার দুইজন মারা গেলো। শোনা যাচ্ছে সাপে দংশন করেছে কিন্তু চোখে দেখা যাচ্ছে না। বিষাক্ত কিছুর কামড় মনে হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
বিষয়টি নিয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ইব্রাহিম হোসেনের মোবাইল ফোনে কল করা হয়। তবে ফোন বন্ধ থাকায় কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. অনুপ কুমার বলেন, হাসপাতালে এ ধরনের কোনো রোগী আসেনি। তবে এমন একটি ঘটনা শুনেছি। তারা রোগীদের রাজশাহী নিয়ে গেছে।
নিয়ামতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সোমবার রাত ১০ টায় শিক্ষার্থীরা ঘুমিয়ে যায়। রাত ২টার দিকে সাপে দংশন করলে শরীর জ্বালা করায় কান্না শুরু করে। ঘটনার পর তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে একজন মারা যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যায়। গুরুতর অবস্থায় অপরজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
আব্বাস আলী/এমআরআর/এমএস