এক লিটনের প্রতারণায় অতিষ্ঠ ইউনিয়নবাসী
কখনো নিজেকে পরিচয় দেন মানবাধিকারকর্মী হিসেবে। আবার কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্স, কখনো ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের পরিচয় দেন। এসব পরিচয়ে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন টাকা।
শনিবার (৫ আগস্ট) দুপুরে লিটন মণ্ডল নামের ওই ব্যক্তির বিচার চেয়ে মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জড়ো হন কয়েকশ মানুষ। তারা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা।
অভিযুক্ত লিটন মণ্ডল বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি গ্রামের মৃত অতুল মণ্ডলের ছেলে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারি চাকরি, ভিজিডি কার্ড, সরকারি ঘর পাইয়ে দেওয়ার মতো নানা প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। বর্তমানে তিনি পলাতক।
লিটনের বিচার চাইতে এসে মিনাল কান্তি রায় নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, তার জমির কাগজপত্র ঠিকঠাক করে দেবেন বলে দুইমাস আগে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা নেন লিটন মণ্ডল। তবে কাজটি করে দেননি। এখন টাকাও দিচ্ছেন না। ফোনও বন্ধ রখেছেন।
চিলার কাটাখালী গ্রামের বলয় রায় ও আলম গাজী বলেন, ভিজিডি কার্ড পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নেন লিটন। বর্তমানে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

আশ্রয়ণের ঘর দেওয়ার কথা বলে জয়মনি গ্রামের অজিত রায়, সুরঞ্জন রায়, বিকাশ রায়, মানিক শিকদার ও আলম ফকিরের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন লিটন।
সবির কুমার বাড়ই নামের একজন গ্রামপুলিশ সদস্য বলেন, তার ছেলেকে উপজেলায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রথমে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন লিটন। পরে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে আরও ১০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু ঘর কিংবা চাকরি কোনোটাই হয়নি তার। প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিটনের বিচার দাবি করেন তিনি।

চিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী আকবর হোসেন বলেন, ‘চিলা ইউনিয়নে মাদকের প্রথম ব্যবসা নিয়ে আসে লিটন মণ্ডল। এলাকায় যুবকদের মাদক ধরিয়ে দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ তাকে আটকও করেছিল। কয়েকদিন হলো বনবিভাগের মামলায় জেল খেটে জামিনে বের হয়েছে লিটন। এখন এলাকার বিভিন্ন লোকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সরকারি ঘর, পানির ট্যাংক ও ভিজিডি কার্ড দেবে বলে প্রলোভন দিয়ে বেড়াচ্ছে শুনেছি। তার ফাঁদে পা দিয়ে সবাই টাকা দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু এসব সুবিধা পাননি কেউই। প্রতারণা করে এলাকার নিরীহ মানুষকে নিঃস্ব করেছে সে।’
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিহির ভান্ডারি ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল হাওলাদারও লিটন মণ্ডলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তার শাস্তির দাবিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে লিটন মণ্ডলকে কল করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খোঁজ নিতে তার এলাকায় গেলে লিটন ঢাকায় আত্মগোপনে আছেন বলে জানান তার প্রতিবেশীরা।
এ বিষয়ে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ বলেন, লিটন মণ্ডলের বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক প্রতারণার অভিযোগ শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবু হোসাইন সুমন/এসআর/জেআইএম