অযত্ন-অবহেলায় ৪ বছর ধরে পড়ে আছে উপহারের নৌ-অ্যাম্বুলেন্স

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
প্রকাশিত: ০৫:০৭ পিএম, ১৫ আগস্ট ২০২৩

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গত চার বছর ধরে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার নৌ-অ্যাম্বুলেন্স। চরবাসীর জরুরি স্বাস্থ্যসেবার জন্য এ নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দেওয়া হলেও তা অচল হয়ে বর্তমানে কলাপাড়া পৌর শহরের হেলিপ্যাড মাঠের পূর্বপাশে আন্ধারমানিক নদীর কিনারে পড়ে আছে।

ভেতরে ময়লা-আবর্জনা জমে এটি এখন নষ্ট হওয়ার পথে। ‘অ্যাম্বুলেন্সটির এখন প্রয়োজন নেই’ বলে কর্তৃপক্ষ তা অন্য কোথাও হস্তান্তরের চেষ্টা করছে। আর এই নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের চালক থাকলেও তিনি হাসপাতালের অন্য কাজে সময় পার করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সমুদ্র উপকূলের দূরবর্তী মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে উপহার হিসেবে অ্যাম্বুলেন্সটি দেন। কিন্তু এর প্রায় চার বছর পার হলেও সেটি এখনো ব্যবহারই করা হয়নি। অ্যাম্বুলেন্সটি নদীর জোয়ারে তলিয়ে থাকে আবার ভাটার সময় ভেসে থাকে। এটি রক্ষণাবেক্ষণ করা না হলে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা কলাপাড়া উপজেলার চাপলী এলাকার বাসিন্দা লুৎফুল হাসান রানা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যারা উপজেলা শহর থেকে দুর্গম এলাকায় বাস করি তাদের জন্য এটা খুবই প্রয়োজন ছিল। কলাপাড়ার অভ্যন্তরীণ ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যোগাযোগব্যবস্থা খুব খারাপ। সব এলাকার রাস্তা পাকা নয়, তাই বর্ষার সময় আমাদের এই অ্যাম্বুলেন্সটি দরকার।

তিনি আরও বলেন, শুধু উপকারের বিষয় না, প্রধানমন্ত্রীর এই উপহারের যথার্থ সম্মানও দেওয়া হয়নি। তাই আমাদের দাবি, এটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হোক।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কলাপাড়া জোনের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন, এই নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে রোগী পরিবহন করা হয়নি কখনোই। এটা রোদ আর বৃষ্টিতে গত চার বছর ধরে একই জায়গায় থেকে অকেজো হয়ে যাচ্ছে। শুকনা মৌসুমে উপজেলা বিভিন্ন স্থানে সহজে যাওয়া যায় কিন্তু বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন এলাকায় সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তখন এই নৌ-অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা যায়। এছাড়া পাশের তালতলী উপজেলা থেকে অনেক রোগী কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা নিতে আসেন। তারাও এটার সেবা পেতে পারতেন।

তিনি আরও বলেন, এটা মূলত উপজেলার দুর্গম এলাকার মানুষকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সরকার পাঠালেও স্বাস্থ্য বিভাগ কোনো প্রকার দেখভাল না করে ফেলে রেখে এখন এটাকে স্থানান্তরের চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষের সেবার মান বৃদ্ধি করতে এটি দেওয়া হলেও বিন্দুমাত্র উপকারে আসেনি। উল্টো সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে।

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিন্ময় হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৯ সালে আমরা এই নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি পাই। এরপরে বিভিন্ন কারণে ব্যবহার উপযোগী করা যায়নি। বর্তমানে উপজেলার সব জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত, এখন এটা ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কোথাও কেউ অসুস্থ হলে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে তাকে বহন করে নিয়ে আসার চেয়ে কম সময়ে রোগীরা সড়ক পথে এখন পৌঁছে যাচ্ছে। তাই এটা আমাদের দরকার হয় না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অ্যাম্বুলেন্সটি সারিয়ে নিয়ে অন্য কোথাও দেওয়ার জন্য কয়েকবার বলা হয়েছে কিন্তু তারা এখনো কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, নৌ-অ্যাম্বুলেন্সের একজন চালক আছেন। তিনি হাসপাতালে বিভিন্ন কাজের সহযোগিতা করছেন। হাসপাতালের জনবল কম থাকায় বিদ্যুৎ, পানির লাইনসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকেন তিনি।

আসাদুজ্জামান মিরাজ/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।