ঠাকুরগাঁওয়ে চায়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে সরকারি স্যালাইন

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ০৭:১১ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২৩

সারাদেশের মতো ঠাকুরগাঁওয়েও বেড়েছে ডেঙ্গুরোগী। সেইসঙ্গে বেড়েছে স্যালাইনের চাহিদা। এই সুযোগে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ১০০ টাকার স্যালাইন ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।

শুধু তাই নয়, সরকারি স্যালাইন হাসপাতালের সামনের চায়ের দোকানে বিক্রির ঘটনাও ঘটেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

স্থানীয় সূত্র জানা যায়, ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের সামনের ফার্মেসিগুলোতে স্যালাইন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক অনুরোধের পর কাউকে স্যালাইন দিলেও ২০০-৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অথচ এসব স্যালাইনের প্যাকেটে দাম লেখা আছে ৮৭ টাকা। ফার্মেসি মালিকরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত এই স্যালাইন বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

অবস্থা এমন হয়েছে, ঠাকুরগাঁওয়ে এক প্যাক স্যালাইন পেতে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে রোগীর স্বজনদের। এ দোকান, সে দোকান ঘুরে কোথাও পাওয়া গেলেও দাম রাখা হচ্ছে প্যাকেটে দেওয়া দামের চেয়ে আড়াই-তিন গুণ বেশি।

এমনকি বেশি দামেও স্যালাইন বিক্রিতে বিশেষ কৌশল করছেন দোকানিরা। স্যালাইন কিনতে গেলে প্রথমেই ‘নেই’ বলে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। পরে অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর গোপন স্থান থেকে এক প্যাক স্যালাইন বের করে দিচ্ছেন। দাম রাখছেন বেশি।

বেশ কয়েকদিন ধরে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের সামনে চায়ের দোকানেও স্যালাইন বিক্রি হচ্ছে। এই বিষয়ে চায়ের দোকানে গেলে কর্মচারী বলেন, ‘আমি কিছু জানি না, দোকানের মালিক দোকানে নাই।’

ওই চা দোকানি জিয়াউল হকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, আমি বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করি। তাই আমার কিছু রোগীর জন্য দোকানে স্যালাইন নিয়ে রেখে দিয়েছিলাম। তিনি চায়ের দোকানের পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করেন বলে দাবি করেন।

পাশের চা দোকানি আসমা বেগম বলেন, আমরা দেখতেছি অনেকদিন ধরে তিনি চায়ের দোকানে স্যালাইন বিক্রি করতেছেন। অনেক লোক এখানে স্যালাইন কিনতে আসেন। এছাড়া এই বিষয়ে আমরা তেমন কিছু জানি না।

সাদেকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমার বউকে নিয়ে হাসপাতালে আসার পরে ডাক্তার আমাকে নরমাল স্যালাইন আনতে বলেন। আমি স্যালাইন কিনতে গিয়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫টা দোকান ঘুরেও পাইনি। অবশেষে সেবা হাসপাতালের পাশে ওষুধের দোকানে পাই। আমাকে ৮৭ টাকার স্যালাইন ২৫০ টাকায় কিনতে হয়।

ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের এক রোগীর স্বজন কালাম বলেন, আমাদের রোগী বাঁচানোর জন্য দাম বেশি হলেও স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। আমাদের কাছ থেকে ৯০ টাকার স্যালাইন ৩০০ টাকা নিচ্ছে। দোকানিরা বলছে, এই দামে নিলে নেন, আর না নিয়ে চলে যান। তখন আমাদের বাধ্য হয়ে বেশি দামে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে।

কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আজিজ বলেন, আমি শুনছি অনেক ওষুধ ব্যবসায়ী বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করছে। এরইমধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে আমি সতর্ক করেছি। পাশাপাশি আমরা বাজার মনিটরিং করছি।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, আমরা রাতে শুনতে পাই হাসপাতালের সামনে চায়ের দোকানে স্যালাইন বিক্রি হয়। তাই সকালে গিয়ে সেই দোকানে অভিযান চালিয়েছি। এই পর্যন্ত কোনো স্যালাইন পাওয়া যায়নি। তবে তিনি চায়ের দোকানে স্যালাইন বিক্রি করতেন বলে আমরা শুনেছি। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।

তানভীর হাসান তানু/এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।