এজাহারে আসামির নাম বাদ দিতে চাপ

বাদীকে থানাহাজতে ২৪ ঘণ্টা আটকে রাখলেন ওসি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নোয়াখালী
প্রকাশিত: ০৪:১৩ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০২৩

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বাদী ও তার বোনকে থানাহাজতে আটকে হত্যা মামলার এজাহারের পাঁচ আসামির নাম বাদ দিতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। পরে এসপির কাছে অভিযোগ করায় তদন্তে নেমেছে জেলা পুলিশ।

শনিবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে সহকারী পুলিশ সুপার (হাতিয়া সার্কেল) আমান উল্যাহ জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় শনিবার (২৬ আগস্ট) বাদীসহ সাক্ষীদের জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে। পরে অভিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পরিদর্শককেও (তদন্ত) ডাকা হবে।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট রাত ১০টার দিকে হাতিয়ার চরকিং ইউনিয়নের হর কুমার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে মো. মিজানুর রহমানকে (৩৩) হত্যা করে। তিনি ওই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত মোস্তাফিজুর রহমান চৌকিদারের ছেলে। পরে ৭ আগস্ট নিহতের বড় ভাই মাফুজুর রহমান (৪০) বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করতে যান। এসময় তিনি ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জনকে আসামি করে এজাহার দাখিল করলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমির হোসেন ও পরিদর্শক (তদন্ত) কাঞ্চনকান্তি দাস তার ওপর চড়াও হন এবং আসামির তালিকা থেকে পাঁচজনের নাম বাদ দিতে বলেন।

আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে যুবককে কুপিয়ে হত্যা

মাফুজুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের কথামতো পাঁচ আসামিকে বাদ দিতে রাজি না হওয়ায় থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাঞ্চনকান্তি দাস আমাকে ও আমার সঙ্গে থাকা বোন মিনারা বেগমকে থানাহাজতে আটকে রাখেন। এক ঘণ্টা পর আমার বোনকে ছেড়ে দিলেও আমাকে ৮ আগস্ট রাত পর্যন্ত প্রায় ২৪ ঘণ্টা হাজতে রাখা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ সময়ের মধ্যে পরিদর্শক (তদন্ত) আমাকে আসামির নাম বাদ দিতে নানাভাবে চাপ দেন এবং ভয়ভীতি দেখান। অন্যথায় ভাই হত্যা মামলায় আসামি করে অথবা ৫০০ ইয়াবা দিয়ে আদালতে পাঠানোর হুমকিও দেন। তাদের ভয়ে পরে মামলার এজাহার থেকে আসামি মো. আজাদ (৩৭), আবু তাহের (৫০), আজমির হোসেন (৩৫), জাকের হোসেন (৪৫) ও মোশারেফ হোসেনের (৩৫) নাম বাদ দিয়ে নতুন এজাহারে সই করেতে বাধ্য হই। বিষয়টি নোয়াখালী পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।

এদিকে পরিদর্শক (তদন্ত) কাঞ্চনকান্তি দাস অভিযোগ অস্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, বাদীর এজাহারটি হত্যা মামলা (নম্বর-২) হিসেবে রুজু করা হয়েছে। যাতে এজাহারনামীয় ১০ আসামি হলেন শাকিল (২৫), শামছুদ্দিন (৪৫), ইয়াছিন আরাফাত (২৩), জহিরুল ইসলাম (৩২), মো. ফাহিম (৩৫), নজরুল ইসলাম (৪৫), মো. ফারুক (৪৮), আবদুর রহমান মিঠু (২৭), আমিরুল ইসলাম (৫০) ও আলা উদ্দিন ভুট্টু (২২)। এখানে আসামি বাদ দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় ছুটিতে ছিলাম। তবে মামলার সময় থানায় ছিলাম। বাদীকে আটক কিংবা এজাহার পরিবর্তনের ঘটনা সঠিক নয়। বাদীর অভিযোগটি হত্যা মামলা হিসেবে রুজু করে তদন্ত চলছে।

নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম ভুক্তভোগী মাফুজুর রহমানের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে সহকারী পুলিশ সুপার (হাতিয়া সার্কেল) মো. আমান উল্যাহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সহকারী পুলিশ সুপার (হাতিয়া সার্কেল) মো. আমান উল্যাহ শনিবার দুপুরে জাগো নিউজকে বলেন, বাদী ও তার বোনকে বারবার খবর দেওয়ার পরও তারা ভয়ে পুলিশের কাছে আসতে চাচ্ছিলেন না। অভয় দেওয়ায় শনিবার (২৬ আগস্ট) তাদের জবানবন্দি নেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে ওসি এবং পরিদর্শক (তদন্ত) উপস্থিত ছিলেন। তাদেরও ডাকা হবে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইকবাল হোসেন মজনু/এএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।