আলিম

অনিয়মিত প্রশ্নে নিয়মিতদের পরীক্ষা, দুশ্চিন্তায় ২২৬ শিক্ষার্থী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা
প্রকাশিত: ১১:২৪ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০২৩

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষায় অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের প্রশ্নে নিয়মিত ২২৬ পরীক্ষার্থীর আলিম পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও চিন্তিত শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।

রোববার (২৭ আগস্ট) ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষায় উপজেলার ধুমাইটারী সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আলিমের ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের প্রশ্নে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, আজ সারাদেশে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষার প্রথম দিনে ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আলিম পরীক্ষার একমাত্র কেন্দ্র ধুমাইটারী সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসায় ২৩৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২২৬ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এতে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষার্থী জানান, অনিয়মিত (ইরেগুলার) শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র দিয়ে নিয়মিত (রেগুলার) শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ায় চিন্তায় রয়েছেন তারা। পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এতবড় ভুল কীভাবে করলেন এটাই তাদের প্রশ্ন। ফলাফল আসবে কি না- এ নিয়েও চিন্তিত শিক্ষার্থীরা।

কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ায় আমরা চিন্তিত যে তাদের রেজাল্ট কী আসবে? এর দায় কোনোভাবে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এড়াতে পারেন না।

ধুমাইটারী সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদরাসার পরীক্ষার্থী মো. শাহিন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজ প্রথম পরীক্ষা ছিল। আমরা প্রশ্নপত্র পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। প্রশ্নপত্রে যে ইরেগুলার লেখা ছিল তা খেয়াল করিনি। পরীক্ষা শেষে বিষয়টি নজরে আসলে শিক্ষকদের বলেছি। তারা দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেছেন।’

মো. আব্দুল আজিজ নামের অপর এক পরীক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা যারা পরীক্ষার্থী তারা না হয় বিষয়টি খেয়াল করিনি, কিন্তু যারা পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন তারা তো ভুল প্রশ্নপত্রে আমাদের পরীক্ষা নিয়েছেন।’

মো. জুলফিকার রহমান নামের আরেক পরীক্ষার্থী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজ প্রথম দিনে ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা ছিল। যেগুলো পড়েছিলাম সেগুলো পরীক্ষায় আসেনি। এতে পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। পরীক্ষা শেষে প্রশ্নপত্র দেখলাম ইরেগুলার প্রশ্নপত্র। এটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।’

কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিরা জানান, পরীক্ষা শুরুর আগে ‘খ’ সেটের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তখন অসাবধানতাবশত অনিয়মিত (ইরেগুলার) শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। পরীক্ষা চলাকালীন বিষয়টি কারও নজরে আসেনি। পরীক্ষা শেষে বিষয়টি নজরে আসলে বোর্ডে যোগাযোগ করা হয়েছে।

ধুমাইটারী সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বরত কেন্দ্র সচিব ও মাদরাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) কে ওয়াই এম আব্দুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

কেন্দ্রের নিয়োজিত ট্যাগ অফিসার ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. জাফর আহমেদ লস্কর জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালীন কেউ বিষয়টি আমাকে জানায়নি। যদি ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিয়ে থাকে এ দায় আমার নয়, এর দায়-দায়িত্ব কেন্দ্র সচিবের।’

এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষায় নেওয়া ঠিক হয়নি। বোর্ড চাইলে এই প্রশ্নপত্রের আলোকে খাতা দেখার নির্দেশ দিতে পারে, তখন পরীক্ষার্থীদের ফলাফল আসবে।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ-নূর-এ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া উচিত হয়নি। এর পুরো দায় কেন্দ্র সচিবের উপর বর্তায়। কেন্দ্র সচিবের সঙ্গে এখনো দেখা হয়নি। ওনাকে ডেকেছি, উনি আসলে বিস্তারিত জানতে পারবো।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কায়সার আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি অনিয়ম। এর দায় কেন্দ্র সচিবের। ইউএনও'কে আমি বলেছি পুরো বিষয় জেনে আমাকে বিস্তারিত জানাতে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শামীম সরকার শাহীন/কেএসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।