দেওহাটা-চড়পাড়া সড়কের ২৩৪ বাতির ১৬২টিই জ্বলে না

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)
প্রকাশিত: ০৩:০৮ পিএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ঢাকা-টাঙ্গাইল পুরাতন মহাসড়কের দেওহাটা থেকে পুষ্টকামুরী চড়পাড়া পর্যন্ত পৌনে চার কিলোমিটার সড়কের উভয়পাশের ১৬২টি সড়কবাতি জ্বলছে না। এসব বাতি না জ্বলায় মহাসড়কের এই এলাকায় ভুতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

মির্জাপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের (পুরাতন) দেওহাটা থেকে পুষ্টকামুরী চড়পাড়া পর্যন্ত পৌনে চার কিলোমিটার এবং মির্জাপুর-উয়ার্শী সড়কের দেওলী ব্রিজ এলাকায় ৪১০ মিটার সড়কের উন্নয়ন কাজের টেন্ডার আহ্বান করে। এই উন্নয়নকাজের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে যশোরের মাইনউদ্দিন বাশিরের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ২০১৯ সালে কাজটি শুরু হয় এবং ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ হয়।

এ কাজের আওতায় সড়কের দুইপাশে ড্রেন নির্মাণ করা হয়। ড্রেনের ওপর ঢালাই (ঢাকনা) দিয়ে টাইলস স্থাপন করে তিন ফুট প্রশস্ত ফুটপাথ তৈরি করা হয়। রাতে আলোকিত করতে লোহার পাইপে মহাসড়কের পৌনে চার কিলোমিটার রাস্তার দুইপাশে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯২টি রঙিন বাতি স্থাপন করা হয়, যার প্রতিটির পেছনে খরচ হয়েছে ৩১ হাজার ২৫০ টাকা। ওই প্রকল্পের বাতি স্থাপনের আগে মির্জাপুর পৌরসভা থেকে মহাসড়কের দুইপাশে ৪২টি বাতি বসানো হয়েছিল।

এদিকে, প্রকল্পটির অধীনে এসব বাতি স্থাপনের পর কয়েক মাসের মধ্যেই প্রায় সবগুলোই বন্ধ হয়ে যায়। গত বছরের জুলাই মাসে জাগো নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তা সচল করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এর এক বছরের মধ্যে পুনরায় ১৬২টি সড়কবাতি বন্ধ হয়ে গেছে। জ্বলছে কেবল ৭২টি বাতি। ফলে মহাসড়কের এই পৌনে চার কিলোমিটার এলাকায় ভুতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

Mirzapur-2.jpg

এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির বাতি বন্ধ থাকায় রাতে মাদকের কারবার এবং ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন।

গত বুধবার রাতে মহাসড়কের দেওহাটা থেকে পুষ্টকামুরী চড়পাড়া পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব বাতি বন্ধ। যেসব বাতি জ্বলছে সেখানে একটু আলোকিত, আবার যেসব বাতি জ্বলছে না সেখানে ভুতুড়ে অন্ধকার। পুষ্টকামুরী জহুর বাড়ি মোড় এলাকায় পৌরসভার চারটি বাতি বন্ধ রয়েছে। এসময় যমুনা ক্লিনিকের পূর্বপাশ থেকে দেওহাটা পর্যন্ত প্রায় খুঁটির বাতিই বন্ধ দেখা যায়।

বাইমহাটী মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. হানিফ মিয়া বলেন, প্রতিদিন রাত ৮টার দিকে ভাগনিকে কোচিং থেকে বাসায় আনতে হয়। মহাসড়কের পাশের বাতিগুলো বন্ধ থাকায় অন্ধকারে ভয় কাজ করে।

মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ২০০০ সালে মির্জাপুর পৌরসভা গঠনের পর রাস্তায় আলোর ঝলকানি দেখতে পাই। দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় বিদ্যুতের আলোয় রাস্তায় চলাফেরা করি। মহাসড়কে হঠাৎ আলো বন্ধ হয়ে গেলে মানুষের চলাফেরায় ভোগান্তি পোহাতে হয়। শুধু ভোগান্তি নয়, ভয়ও কাজ করে। কখন কোন বিপদ সামনে আসে। অন্ধকারে কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে, তার ঠিক নেই। সড়কবাতি থাকলে এ সমস্যা হবে না।

মির্জাপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলম মিয়া বলেন, বাইমহাটী এলাকায় উপজেলা পরিষদ ছাড়াও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়সহ বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা আশপাশের বাসায় ভাড়া থাকেন। তাদের ছেলেমেয়েরা বিকেলে সদরের বিভিন্ন স্থানে প্রাইভেট ও কোচিং করে থাকে। তারা সন্ধ্যার পর ওই রাস্তা দিয়ে বাসায় যেতে ভয় পায়। মহাসড়কে আলো থাকলে ভয় থাকে না।

মির্জাপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পৌরসভার উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড এলাকায় মহাসড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করে বাতি জালানোর ব্যবস্থা ছিল। নষ্ট হলে মেরামত করা হতো। সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদ্যোগে সড়কবাতি স্থাপন করায় পৌরসভার অধিকাংশ বাতি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন সড়ক ও জনপথের বাতিগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে কয়েকটি জ্বললেও প্রায় সব বাতিই বিকল হয়ে আছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মাইনউদ্দিন বাশিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের মির্জাপুর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শামীম হোসাইন বলেন, আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। রাস্তার পাশে বাতির প্রকল্প দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এস এম এরশাদ/এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।