সাপে কামড়

‘সময়মতো ভ্যাকসিন দিতে না পারায় আমার ভাই দুনিয়া থেকে চলে গেছে’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নোয়াখালী
প্রকাশিত: ০৫:৩৯ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলায় সাপেকাটা ভ্যাকসিনের অভাবে নুপুর কর্মকার (৩২) নামে এক সরকারি কর্মচারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে উপজেলার হরিকৃষ্ণপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে তাকে বিষধর সাপ ছোবল দেয়।

নিহত নুপুর কর্মকার ওই গ্রামের কুন্তল কৃষ্ণ কর্মকারের ছেলে। তিনি সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন।

পরিবারের লোকজন জানান, রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় বাড়ির দরজায় হাঁটাহাঁটি করার সময় বিষধর সাপ নুপুরকে কামড় দেয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ভ্যাকসিন নেই বলে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নুপুর কর্মকারের চাচাতো ভাই সমীর কর্মকার জাগো নিউজকে বলেন, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালেও সাপেকাটা রোগীর ভ্যাকসিন নেই এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেওয়া যাবে না জানিয়ে শেষ রাতের দিকে নুপুরকে কুমিল্লা মেডিকেলে পাঠানো হয়। সেখান নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা রূপসী রাণী কর্মকার। তিনি বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন আর বলছেন, আমার মেধাবীরে এনে দাও। আমার সরকারি চাকরিজীবী সোনার টুকরা ছেলে চোখের সামনে থেকে কেমনে চলে গেলো।

নুপুরের বড়ভাই রিপন কর্মকার বলেন, বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর নুপুরের মরদেহ দাহ করা হয়েছে। সময়মতো ভ্যাকসিন দিতে না পারায় আমার একমাত্র ভাই দুনিয়া থেকে চলে গেছে। এ বিষয়ে আমরা আইনি প্রতিকার চাইবো।

সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের গোপনীয় সহকারী (সিএ) মো. আবদুল মতিন জাগো নিউজকে বলেন, খবর পেয়ে আজ দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেনসহ অফিসের সবাই গিয়ে নুপুরের মরদেহ দেখে এসেছি। ভ্যাকসিনের অভাবে একটি তাজাপ্রাণ ঝরে গেলো বিষয়টি দুঃখজনক।

চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খন্দকার মোশতাক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, রাত ১২টার দিকে রোগীকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে আনা হয়। আমাদের কাছে সাপেকাটা ভ্যাকসিন না থাকায় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমিল্লায় পাঠানো হয়। সেখানে সে মারা যায়।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কাছে সাপেকাটা রোগীর পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন মজুত আছে। কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জাগো নিউজকে বলেন, আমি বিষয়টির খবর নিয়েছি। রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ ছিল। নোয়াখালীতে ভ্যাকসিন মজুত আছে কিন্তু আইসিইউ নাই। তাই তাকে কুমিল্লায় পাঠানো হয়েছে। তারপরও কারও অবহেলা থাকলে তা আমরা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবো।

নুপুর কর্মকার ২০২২ সালে জেলা প্রশাসনের কর্মচারী হিসেবে সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে গণিত বিভাগে উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। নুপুরের আকস্মিক মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ইকবাল হোসেন মজনু/এমআরআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।