হাতে-কলমে শিক্ষা

কাদাজলে নেমে ধান রোপণ করে সাড়া জাগালো শিক্ষার্থীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০৭:৩২ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

যে কচি হাতে বই-খাতা ও কলম ধরছে শিক্ষার্থীরা সেই হাতেই রোপণ করছে ধানের চারা। ছাত্র-ছাত্রী সবাই মিলে শিখছে রান্নাসহ সব কাজ। নতুন পাঠ্যসূচি বাস্তবায়ন করতেই নেত্রকোনার খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক শুরু করেছেন হাতে-কলমে এ কার্যক্রম।

শত শত শিক্ষার্থী জমি তৈরি থেকে শুরু করে কাদায় নেমে দিনভর ধানের চারা রোপণ করছে। এই শিক্ষা বাস্তব জীবনে শতভাগ কাজে আসবে বলে মনে করছে শিক্ষার্থীরা। ব্যতিক্রমী কাজের নেপথ্যে থাকা জেলার আটপাড়ায় খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক শাকিল আহমেদ এই কাজের পর সবার প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন।

jagonews24

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রখর রোদে মাঠে ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শতাধিক শিক্ষার্থী। জেলার আটপাড়া উপজেলার খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক শাকিল আহমেদ হাতে-কলমে শেখাচ্ছেন পাঠ্যসূচির একটি অধ্যায়। স্কুলের পোশাক পরেই কাদাজলে নেমেছে তারা। এর আগে যত্ন করে জমির আগাছা পরিষ্কার করে মই দিয়ে জমি সমানও করে তারা। এরপর জমির আইলে রাখা ধানের চারা নিয়ে রোপণ করে। একজন অভিজ্ঞ কৃষকের দিক নির্দেশনায় দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ৩৫ শতক জমিতে ধানের চারা রোপণ করে নজির সৃষ্টি করে এই খুদে চাষিরা।

শিক্ষার্থীদের ধান রোপণের এই দৃশ্য দেখতে আসেন অভিভাবকসহ এলাকাবাসীও। অভিভাবকদের চোখেও বিষয়টি ভালো লেগেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

jagonews24

আরও পড়ুন: হাতে-কলমে ধানের চারা রোপণ করা শিখলো ছাত্র-ছাত্রীরা

ওই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার, মুন্নি আক্তার ও ইমু আক্তার জানায়, বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের নাম, ‘ফসলের ডাক’। ফসল বোনা, পরিচর্যা, সংরক্ষণ, হরিধান ইত্যাদি বিষয়ের উল্লেখ আছে সেখানে। বাবাও কৃষক। কিন্তু কখনো মাঠে গিয়ে তাকে সাহায্য করিনি। এখন থেকে বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করবো।

পাঠ পরিকল্পনামতে একদিন সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ক্লাসে হাজির হলেন কৃষক হারিজ উদ্দিন। শিক্ষার্থীদের শাকিল আহমেদ আগের দিনই বলে রেখেছিলেন এক ‘অতিথি শিক্ষক’ আসার কথা। কৃষক হারিজকে সামনে পেয়ে শিক্ষার্থীরা একের পর এক প্রশ্ন ছুড়তে লাগলো। প্রথম দিকে জড়তা থাকলেও ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে ওঠেন অতিথি শিক্ষক কৃষক হারিজ। অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে নিজের মতো করে শিক্ষার্থীদের কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা করলেন।

শিক্ষার্থীরা এবার নিজ হাতে ফসল বুনতে আগ্রহী কিনা প্রশ্নের জবাবে সমস্বরে ‘হ্যাঁ’ বলে। শাকিল তখন বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষক এবং কৃষক হারিজের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। তারাও ইতিবাচক সাড়া দিলেন। কিন্তু ততোদিনে বোরো মৌসুমের চারা রোপণের সময় পার হয়ে যাওয়ায় আমন মৌসুমের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

jagonews24

শিক্ষক শাকিল আহমেদ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই একজন শিক্ষার্থী যদি জানে জমিতে ফসল বোনা, পরিচর্যা ও সংরক্ষণ কীভাবে করতে হয় তাহলে এটা তাকে আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করবে। একাজে জড়িত হয়ে সে কখনো কৃষিকাজকে ছোট করে দেখবে না। নিজের কাজ নিজে করে আনন্দও পাবে। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে হাতে-কলমে কাজ শিখলে তা জীবনভর কাজে লাগে। এজন্যই তাদের মাঠে নিয়ে এসেছি।’

মাঠে শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেওয়া ওই জমির মালিক কৃষক হারিজ উদ্দিন বলেন, ‘এই ছেলেমেয়েরা আমার কয়েক হাজার টাকা বাঁচিয়ে দিয়েছে। এরা এত ভালোভাবে কাজ করবে ভাবতে পারিনি।’

আরও পড়ুন: চলাচলের অযোগ্য রাস্তা, ধান রোপণ করে প্রতিবাদ

স্কুলের প্রধান শিক্ষক খায়রুল আলম বলেন, ‘এই কাজের মাধ্যমে ছেলে-মেয়েরা যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তা পারিবারিক কাজকর্মে প্রয়োগ করলে পরিবার খুব উপকৃত হবে। এই বয়সী অনেক ছেলেমেয়ে আজকাল অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারসহ নানা বাজে অভ্যাসে আসক্ত হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ দলবদ্ধ হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে। এসব থেকে সমাজকে রক্ষা করতে এই ধরনের কার্যক্রমের বিকল্প নেই।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল গফুর বলেন, ‘খিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের মতো যদি প্রতিটি স্কুল ছেলে-মেয়েদের এভাবে শেখায় তাহলে শিক্ষার্থীরা স্বনির্ভর হবে, দেশও এগিয়ে যাবে। ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণিতে এই ধরনের নতুন কারিকুলাম যুক্ত করা হয়েছে। ওই স্কুলের মতো প্রতিটি স্কুলে হাতে কলমে শিক্ষা চালু করা দরকার।

এফএ/এএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।